অবশেষে নৌকার মনোনয়ন হারালেন মন্দিরে হামলার চার্জশিটভুক্ত ২ আসামি

দেশজুড়ে আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের হিন্দুপল্লী ও মন্দিরে হামলা-ভাংচুর মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী করার পর সমালোচনার মুখে দুজনকে পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ।

নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে আবুল হাসেমের পরিবর্তে সাবেক ইউপি সদস্য পুতুল রানী বিশ্বাস এবং হরিপুর ইউনিয়নে দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখির পরিবর্তে মো. ওয়াসিম আহমেদকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বৃহস্পতিবার এ দুই ইউনিয়নে প্রার্থী পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ কর্তৃক মনোনয়নের তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, নাসিরনগর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রার্থীদের মধ্যে ২০১৬ সালে হিন্দুদের ওপর হামলার মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের নাম। এতে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।

দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের উপজেলা ও জেলা শাখার নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এমন বিতর্কিত তিন ব্যক্তিকে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় চরম অস্বস্তিতে পড়েন নাসিরনগর উপজেলা ও জেলা শাখা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

পরে বুধবার বিতর্কিত প্রার্থীর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর নাসিরনগর উপজেলার হরিণবেড় গ্রামের জেলে পরিবারের রসরাজ দাস নামের এক যুবক ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর ছবি পোস্ট করেছে- এমন অভিযোগ তুলে তাকে পিটিয়ে পুলিশে দেয় একদল যুবক। পরদিন ৩০ অক্টোবর এলাকায় মাইকিং করে উপজেলা সদরে পৃথক দুইটি সমাবেশ থেকে ১৫টি মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক ঘরবাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ভোরে ও ১৩ নভেম্বর ভোরে আবারো উপজেলা সদরে হিন্দুদের অন্তত ছয়টি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মোট আটটি মামলায় দুই হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করা হয়। এসব মামলায় ১২৬ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছিল পুলিশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার প্রায় ১৩ মাস পর ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর উপজেলা সদরের গৌরমন্দির ভাংচুর মামলায় নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম, পূর্বভাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আক্তার মিয়া ও হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিসহ ২২৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে ২২৮ জনের মধ্যে হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখিকে ঘটনার ‘মূল হোতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।