স্কুল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষামূলক টিকাদান

দেশে করোনা প্রতিরোধে বড়দের পর এবার শিশুদেরও টিকাদান শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ১২০ শিশুকে ফাইজারের টিকা দেয়া হয়। গতকাল ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মানিকগঞ্জের চারটি সরকারি বিদ্যালয়ের এসব শিশুকে করোনার টিকা দেয়া হয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও মানিকগঞ্জের কর্ণেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃক আয়োজিত কর্র্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টিকাকেন্দ্রে ১২০ শিশুকে করোনার টিকা প্রয়োগ করা হয়। উদ্বোধন শেষে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি ও ফাইজারের টিকা সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, টিকাটি আমেরিকা, ইউরোপসহ অন্যান্য অনেক দেশে দেয়া হচ্ছে। টিকাটি অনেক বেশি নিরাপদ। আমরা চাই, আমাদের শিশুরাও নিরাপদে থাকুক। তারা স্কুলে আসছে, তারা যেন করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকে। এইজন্য ফাইজারের এই টিকাটি আমাদের শিশুদের দিয়ে ট্রায়াল করা হলো। অল্পদিনের মধ্যেই সারা দেশেই ফাইজারের টিকাটি ছেলে মেয়েদের দেয়া হবে। আমাদের হাতে ৬০ লাখ টিকা আছে যার মধ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীদের টিকা দেবো। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই টিকাদান কর্মসূচি পরবর্তীতে দেশের ২১টি স্থানে শিশুদের টিকা দেয়া হবে। ১ কোটি শিশুকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। রাজধানীতে বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে টিকাদান কর্র্মসূচি শুরু করা হবে। করোনা ভাইরাস থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখতেই এই টিকা কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান, যে সময়ে বিশ্বের বহু দেশ টিকা না পেয়ে হাহাকার অবস্থায় আছে সে সময়ে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে অন্তত ৬ কোটি মানুষকে ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিন প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটিজ, সেরাম ইনস্টিটিউট বা চীনের সিনোফার্মের টিকা সহ অন্যান্য মাধ্যম থেকে ইতিামধ্যেই দেশে অন্তত ২৪ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতি মাসেই পর্যাপ্ত সংখ্যক টিকা দেশে আসছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকেও টিকা আসা শুরু হয়েছে। বর্তমানে টিকাদানে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। আমরা গত ২৮শে সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে এক দিনেই প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রদান করে আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে দেশের বয়স্ক নাগরিকদের টিকা দেয়ার পাশাপাশি দেশের স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের টিকা দিয়ে দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের পাঠদান কার্যক্রম চলমান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে দেশে বর্তমানে করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ এখন ভারত, পাকিস্তান সহ বহু দেশের থেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে, এই ভালো অবস্থানকে আমাদের সকলের সহযোগিতায় ধরে রাখতে হবে। করোনা প্রতিরোধে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা সহ আমাদের সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া সময় মতো টিকা পেলে আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার সম্ভাবনার কথাও জানান মন্ত্রী। উল্লেখ্য, গড়পাড়া জাহিদ মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া আক্তার তোয়া প্রথম মেয়ে শিশুর টিকা গ্রহণ করেছে। টিকা গ্রহণ শেষে তাসমিয়া তোয়া উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানায়, স্কুল খোলার পর থেকে ভয়ে ভয়ে ক্লাস করেছি। এখন টিকা নিয়ে নিশ্চিন্তে ক্লাস করতে পারবো। করোনার ভয় মন থেকে কেটে গেছে। শিশুদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা, কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ, মানিকগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন। আমাদের প্রতিনিধি রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে জানান, ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১টা ২০ মিনিট। মানিকগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিথিলা আক্তার তার মা’কে সঙ্গে নিয়ে কর্নেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসে। টিকা নিতে এসে কেমন লাগছে, জানতে চাইলে তার চোখে মুখে এক ধরনের ভয়ের ছাপ লক্ষ্য করা যায়। এখানে আসার পর থেকেই খুব ভয় পেয়েছিলাম। দুই জন নার্স যখন সুই নিয়ে আমার ডান হাতে পুশ করছিল তখন মনে মনে দোয়া পড়ি এবং ভয়ে চোখ বন্ধ করে দেই। মনে হচ্ছিল কিনা কি হবে। তবে টিকা পুশ করার পর পিঁপড়ার মতো একটু কামড় দিয়েছে। টিকা নেয়ার পর সব আতঙ্ক কেটে গেছে। মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন জানায়, আমাদের স্কুলের ৫০ জন শিক্ষার্থী একসঙ্গে এসে টিকা নিতে পারায় খুব ভালো লেগেছে। প্রথমে আমরা সবাই একটু ভয়ে ছিলাম। তবে সহপাঠীরা এক সঙ্গে থাকায় ভেতরে সাহস ছিল। মানিকগঞ্জ থেকে আমরাই শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথম করোনার টিকা নিতে পেরে সৌভাগ্যবান। মানিকগঞ্জ জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. লুৎফর রহমান জানান, প্রথম পর্যায়ে শহরের দু’টি স্কুলের ৫০ জন করে ১০০ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও পরে বিশেষ বিবেচনায় মন্ত্রীর নামে স্থাপিত গড়পাড়া জাহিদ মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ জন ও সদর উপজেলার আটিগ্রামের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ জনকে টিকা দেয়া হয়। জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা জাহান, প্রাথমিকভাবে জেলার চারটি স্কুল থেকে নবম ও দশম শ্রেণির ১২ থেকে ১৭ বছরের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হয়। এ পর্যায়ে জেলা শহরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ জন. সরকারি এসকে বালিকা বিদ্যালয়ের ৫০ জন, গড়পাড়া জাহিদ মালেক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ জন এবং আটিগ্রাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষাথীকে ফাইজারের টিকা দেয়া হয় বলে জানান শিক্ষা অফিসার।