হাজীগঞ্জে শিশু ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনা গুজব

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে গুজব রটাচ্ছে বিশেষ মহল। শনিবার সকাল থেকে দেশ-বিদেশের একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ে মা-বোন ও দশ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। শিশুটি মারা গেছে। মূলত হাজীগঞ্জ উপজেলায় এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ বলছে- খবরটি ‘অসত্য ও গুজব’।

তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কুচক্রী মহল একটি সাম্প্রদায়িক ইস্যু বানিয়ে গুজব রটাচ্ছে।

শনিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল থেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এ মর্মে খবর ছড়ানো হয় যে, ‘ধর্ষণের শিকার সনাতন সম্প্রদায়ের ১০ বছরের ওই শিশু মারা গেছে’। এমনকি শিশুটির সঙ্গে তার ‘মাসি (খালা) ও বোনও ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে’ বলে কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হয়।

এ খবরকে নাকচ করে দিয়ে হাজীগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রুহিদাস বণিক এক ভিডিওবার্তায় বলেন, ‘কতিপয় কুচক্রী মহল হাজীগঞ্জে নারী ও শিশুর শ্লীলতাহানি ঘটেছে বলে এক ধরনের গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছে। তবে এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, জাতীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বা বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের কোনো নেতৃবৃন্দ অবগত নয়। অতএব সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ধরনের গুজব পরিহার করার জন্য অনুরোধ করছি।’

হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শোয়েব আহমেদ চিশতী বলেন, ‘খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আমি বেশ কয়েকবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নথিপত্র খুঁজেছি। তবে এ ধরনের কোনো রোগী আমাদের হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়নি। তার কোনো রেকর্ড নেই। আমি কিছুক্ষণ আগেও পুনরায় পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। কিন্তু এমন কোনো কিছু পাইনি।’

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল ঘোষ বলেন, ‘হাজীগঞ্জে যদি এই ধরনের কোনো ঘটনা হতো তাহলে অবশ্যই তা আমি অবগত হতাম। যেহেতু এই বিষয়ে এখনো আমি কিছু জানি না, সেহেতু মনে হয় না যে এ ধরনের কিছু হয়েছে। হলে আমি অবশ্যই জানতে পারতাম।’

হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এ বিষয়ে থানায় এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। যতটুকু জেনেছি এ ধরনের কোনো ঘটনা হাজীগঞ্জ ঘটেনি। বিষয়টি গুজব।’

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। ইতোমধ্যে উপজেলার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং নেতারা নিশ্চিত করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। এখানে কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করবেন না এবং একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশের শৃঙ্খলা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। কেউই গুজবে কান দেবেন না। কোনো কিছু শুনলে আগে তার সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করুন।’