‘কান বন্ধ’ রেখে কঠিন চ্যালেঞ্জে মুমিনুল

করোনার ধাক্কা সামলে এ বছর শুরুতেই টেস্ট ক্রিকেটে ফেরে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দেশের মাটিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়ানশিপের মিশনে জয় তুলে নেয়ার দারুণ সুযোগ ছিল টাইগারদের সামনে। কিন্তু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হার দিয়ে শুরু করে মুমিনুল হক সৌরভের দল। এরপর মিরপুর শেরেবাংলা মাঠেও সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে লজ্জার পরাজয়। এরপর শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েতে ৩টি ম্যাচ খেললেও দেশের মাটিতে আর কোনো টেস্ট খেলা হয়নি। এরই মধ্যে অবশ্য দামামা বাজে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। যেখানে সুপার টুয়েলভ পর্বে টানা পাঁচ হার। এমনকি দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ। এবার শক্তিশালী বাবর আজমের দিলের বিপক্ষে টেস্ট মিশন বাংলাদেশের। আজ সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুরু হচ্ছে চট্টগ্রামের জহুর আহদে চৌধুরী স্টেডিয়ামে। টাইগারদের বাজে পারফরম্যান্সে আলোচনা-সমালোচনা এখন তুঙ্গে। ক্রিকেট বোদ্ধা থেকে শুরু করে ভক্তকূল সবাই যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে। তবে বাইরের আলোচনা-সমালোচনায় কান দিতে চান না অধিনায়ক মুমিমুল হক। নিজের কান বন্ধ রেখে মাঠেই প্রমাণ করার প্রত্যয় তার কন্ঠে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বলেন, ‘আগেও এমন (বাজে) সময় গিয়েছে, আমরাও সেই সময় থেকে বের হয়ে এসেছি। মানসিকভাবে সবাই এই সময়টায় দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ, আমরা বাইরের কথাগুলো গ্রহণ করি। আমি চেষ্টা করছি সবাই যাতে বাইরের কথায় কান না দিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ রাখে। আপনি মানুষের মুখ বন্ধ করতে পারবেন না, নিজের কান বন্ধ করতে পারবেন।’ টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভের আত্মবিশ্বাসের কারণটাও ভিন্ন। টি-টোয়েন্টি মিশন শেষ। তার টেস্ট চ্যালেঞ্জ শুরু হচ্ছে এই ফরম্যাটের স্পেশালিস্টদের নিয়েই। তিনি বলেন, ’এই দলের বেশিরভাগই শুধু টেস্ট খেলোয়াড়। সবাই যার যার ভূমিকা জানে। বিশ্বকাপের ব্যর্থতা মনে হয় না খুব বেশি প্রভাব ফেলবে।’ কিন্তু যাদের টেস্ট স্পেশালিস্ট বলা হচ্ছে তাদের অভিজ্ঞতা যে একেবারেই কম। ওপেনিংয়ে নেই তামিম ইকবালের মতো পরীক্ষিত ক্রিকেটার। ইনজুরির কারেণ বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দেশে থেকেও খেলতে পারছেন না। সবশেষ জিম্বাবুয়েতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে টেস্ট জয় উপহার দেয়া মাহমুদুল্লাহ নিয়েছেন অবসর। দলে সিনিয়র বলতে শুধু মুশফিকুর রহীম। ইনজুরির কারণে দলে নেই দেশের সেরা দুই পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদও। দলে যারা আছেন তাদের টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা কম। বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘অধিনায়কদের জন্য এটা চ্যালেঞ্জ, যখন সিনিয়ররা থাকেন না। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির চিত্র আলাদা, কিন্তু টেস্টে সবসময় সিনিয়রদের প্রয়োজন হয়। একটু চ্যালেঞ্জ তো অবশ্যই থাকবে। তরুণ অধিনায়ক হিসেবে আমার জন্য অবশ্যই এটা হতাশাজনক। কিন্তু এটা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। জুনিয়রদের দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। তাদের জন্য এটা সুযোগ, নিজেকে প্রমাণ করার, নিজেকে দেখানোর। সাকিব ভাই, তামিম ভাই, তাসকিন- তারা নিয়মিত খেলোয়াড়। তারা না থাকলে আমার কাজ একটু কঠিন হয়ে যায়। তবে এটা চলমান প্রক্রিয়া। কাউকে পাবো, কাউকে পাবো না। এটা নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। যারা আছে তাদের নিয়েই আমাকে এগোতে হবে।’ পাকিস্তানের দুর্দান্ত ব্যাটিং শক্তির বিরুদ্ধে দুর্বল টাইগারদের বোলিং। দুই ইনিংসে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট নেয়াই এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে মোস্তাফিজ, শরিফুল, তাসকিনরা না থাকলেও অধিনায়ক আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘মোস্তাফিজ শেষ টেস্ট খেলেছে প্রায় এক বছর আগে। তাসকিন-শরিফুল দুইজনই দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইনজুরিতে। রাহী, ইবাদত ওরা কিন্তু নিয়মিত টেস্ট খেলছে। খালেদও আছে। যারা আছে তারা কিন্তু অভিজ্ঞ। গত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আমাদের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট পাওয়া বোলার রাহী। ইবাদতও সর্বশেষ ম্যাচে মোটামুটি ভালো বল করেছে। মিরাজ, তাইজুল আছে। বোলার যারা আছে তাদের নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী। আশা করি তারা ভালো করবে।’ অন্যদিকে ব্যাটিংয়ে তামিম-সাকিব না থাকলেও সাগরিকার সফল ব্যাটসনম্যানের নাম মুমিনুল। ৭টি সেঞ্চুরি তার এই ভেন্যুতে। আছে একটি ফিফটিও। অন্যদিকে মুশফিকের ৭ ফিফটির সঙ্গে আছে একটি সেঞ্চুরি। তবে এসব পরিসংখ্যান টাইগার অধিনায়ক মাথায় নিয়ে নামতে চান না। তিনি বলেন, ’সাতটা সেঞ্চুরি আছে- এসব কখনও মাথায় রাখতে চাই না। সবসময় লম্বা সেশন, ৪-৫ সেশন ব্যাটিং করার লক্ষ্য নিয়ে যাই। অন্যান্য ম্যাচের মতো সাধারণ পরিকল্পনাই করি। আগে কতটা সেঞ্চুরি আছে এসব নিয়ে চিন্তা করি না। আর আমি তো মুশফিক ভাইয়ের কাছে পঞ্চাশ-একশ না, দেড়শ-দুইশ আশা করি। এই ভেন্যু আমার বাড়িঘরের মতো না। ভালো খেলার চেষ্টা করি, আল্লাহর রহমতে হয়ে যায়।’