৫% দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কাজ আনতে হয়: গোলাপগঞ্জের মেয়র রাবেল

সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল বলেছেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে যাই। সচিবালয়ে সচিবদের সঙ্গে মিটিং করি, এলজিইডি মিনিস্টারের সঙ্গে মিটিং করি। তাদের কাছ থেকেই আমাদের ফান্ড আনতে হয়। ওখানে বিরাট একটা পার্সেন্টিজ দিয়ে আনতে হয়। আপনি ১০০ কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে আসলেন। সেখানে ৫ পার্সেন্ট আগেই দিয়ে আসতে হয়।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেলের মন্ত্রী, দেশ ও দল নিয়ে মন্তব্য করা এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গোটা উপজেলায় চলছে তোলপাড়। খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যেও দেখা দিয়েছে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া।

বুধবার রাতে লন্ডনে গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেছিলেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ে মেয়র রাবেল বলেন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আমি এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছি। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডকে আমি সাজিয়েছি। লাইটিং করেছি। আরিফ ভাই (সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী) যেভাবে টাউনকে উন্নত করেছেন, আমি সেভাবে গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন করেছি। আমরা প্রবাসে থাকায় বাংলাদেশের মতো মন-মানসিকতা নয়। এ কারণে কাজ করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, দেশ খুব সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও উন্নত হোক— এটা আমরা আশা করি। একজন ভালো মানুষ গোটা দেশকে ভালো করবে সেটি সম্ভব নয়। দেশে এখনো প্রচুর পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, আমরা তো গিয়ে ফান্ডিং আনি। আমরা মন্ত্রণালয়ে যাই। সচিবালয়ে সচিবদের সঙ্গে মিটিং করি, এলজিইডি মিনিস্টারের সঙ্গে মিটিং করি। তাদের কাছ থেকেই আমাদের ফান্ড আনতে হয়। ওখানে বিরাট একটা পার্সেন্টিজ দিয়ে আনতে হয়। আপনি ১০০ কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে আসলেন। সেখানে ৫ পার্সেন্ট আগেই দিয়ে আসতে হয়। এটাই হচ্ছে বাস্তব দিক। সেখানে প্রকল্প পাস করাতে পার্সেন্টেজ দিতে হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রাবেল বলেন, বাংলাদেশে যে ইলেকশনগুলো হচ্ছে, সেখানে আমি নৌকার বিরুদ্ধে দু’বারই পাশ করেছি। আমি একবার মেয়র ছিলাম বলে মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। পরেরবার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন। আপনারা জানেন, নির্বাচনে যে দলীয় প্রতীক পাবেন তাকে পাশ করাতেই হবে। এর মাঝেও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় নৌকা, ধানের শীষ থেকে ৫-৭ গুণ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। একজন প্রবাসী হিসেবে মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন। আমি প্রবাসীদের মুখ উজ্জ্বল রাখতে কাজ করছি।

তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবকে গিয়ে বলেছিলাম, আমি একজন প্রবাসী, নির্বাচন করব কিন্তু তিনি অনুমতি দেননি। প্রবাসে যাও বলে দিয়েছিলেন। আমি তখন চ্যালেঞ্জ করে উনাকে বলেছিলাম, আপনারা যে প্রার্থীই দেন আমি পাশ করব। আপনার বাংলাদেশি প্রার্থী পাশ করাতে পারবেন না। এরপর তিনি আমাকে মনোনয়ন দেননি। আসলে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র এখনো ঠিক হয়নি।

এদিকে গোলাপগঞ্জের মেয়রের এমন মন্তব্যে আওয়ামী লীগসহ গোটা এলাকায় তোলপাড় চলছে। এ বিষয়ে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রুহিন আহমদ খান বলেন, মন্ত্রণালয়ে পার্সেন্টিজ দিয়ে বরাদ্দ আনতে হয় সেটা কখনো শুনিনি। ৩ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে টাকার কথা উল্লেখ করে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন সেটিও সত্য নয়।

পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, মন্ত্রী ও সচিবদের পার্সেন্টিজ দিয়ে বরাদ্দ আনতে হয় এটা প্রথম শুনলাম। আমি দীর্ঘদিন মেয়র ছিলাম। কখনো এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মেয়র রাবেল পৌরসভায় যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কাজ করেছেন সেটাও ঠিক নয়। পৌর এলাকায় মাত্র ৫ পার্সেন্ট কাজ হয়েছে। তাহলে বাকি টাকা গেল কোথায়। আমি মেয়র থাকাকালে যে লাইটিং করেছিলাম সেভাবেই ৯ ওয়ার্ডে লাইটিং রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করলেও আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী, এলজিইডি মন্ত্রী এবং সচিবদের নিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি শিষ্টাচারবহির্ভূত। লন্ডনে গিয়ে তিনি দেশের মানুষের বিরুদ্ধে এমন দুর্নাম রটাবেন- সেটিও কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

জানা গেছে, আমিনুল ইসলাম রাবেল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে গোলাপগঞ্জে পৌর নির্বাচন করতে চাইলেও তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। গেল বছর গোলাপগঞ্জ পৌর নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচনে বিদ্রোহী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হয়ে পদও হারান তিনি। বর্তমানে যুক্তরাজ্য সফরে রয়েছেন তিনি। এজন্য এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।