মজুরি ৪০০ টাকাসহ চা শ্রমিকদের সাত দাবি

১৯২১ সালের ২০ মে বৃটিশ শাসনামলে নির্মম অত্যাচার ও শোষণ থেকে মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার চা শ্রমিক ‘মুল্লুকে চলো’ (দেশে চলো) নামের আন্দোলনের ডাক দেয়। আন্দোলন দমাতে গুলি চালিয়ে নির্বিচারে হাজার হাজার চা শ্রমিকদের হত্যা করা হয়। ঘটনার পর একে একে ৯৯টি বছর কেটেছে। কিন্তু নির্মম হত্যাযজ্ঞের বিষাদময় স্মৃতি বংশ পরস্পরায় আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন প্রায় ৭ লাখ চা শ্রমিক। কিন্তু এই দিনটির কোন জাতীয় স্বীকৃতি তারা আজও পায়নি।

১৮৫৪ সালে পরীামূলকভাবে সিলেটের মালিনীছড়া চা বাগানে চা চাষ শুরু হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর এক ইংরেজ কর্মকর্তার বাবুর্চি ওয়ারিয়া করিমগঞ্জের সিলেরচর এলাকার একটি টিলায় প্রথম অপরিচিত গাছ দেখে তার সাহেবকে জানালে ওই ইংরেজ কর্মকর্তা সেটিকে চা গাছ হিসেবে শনাক্ত করেন। এরপর ইংরেজ কোম্পানিই এ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু করে।

প্রথমে সিলেট বিভাগের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ তারপর চট্টগ্রামসহ দেশের আরও কয়েকটি এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। এরপর চা শিল্প করার জন্য ভারতের আসাম, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে আসা হয়। বড় বড় পাহাড় পরিষ্কার করে চা গাছ রোপণ করতে গিয়ে হিংস্র পশুর কবলে পড়ে কত শ্রমিকের জীবন গেছে তার কোন পরিসংখ্যান ব্রিটিশরা রেখে যায়নি। তাদের অব্যাহত নির্যাতনের প্রতিবাদে তৎকালীন চা শ্রমিক নেতা পন্ডিত দেওশারন ও গঙ্গাঁ দীতি ১৯২১ সালের ২০ মে চা শ্রমিকরা ‘মুলুকে চলো’ আন্দোলনের ডাক দেয়। সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার চা শ্রমিক সিলেট রেল স্টেশন থেকে হেঁটে চাঁদপুর মেঘনা স্টিমার ঘাটে পৌঁছে। তারা জাহাজে চড়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে ব্রিটিশরা গুলি চালিয়ে হাজার হাজার চা শ্রমিককে হত্যা করে মেঘনা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। সেখান থেকে অনেক শ্রমিক পালিয়ে এলেও আন্দোলন করার অপরাধে তাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা পরাগ বাঁড়ই বলেন, চা শ্রমিকরা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ দেশে বাস করছে। তারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। সেই চা শ্রমিকরা আজও অবহেলিত। বর্তমান শ্রমিকবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি- এই অবহেলিত চা শ্রমিকদের বাসস্থানের জায়গাটুকু যাতে তাদের নিজের নামে করে দেয়া হয়। যাতে বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের যখন তখন ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে না পারে।

এ ছাড়া ২০ মে (শুক্রবার) চা-শ্রমিক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ফেডারেশন চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা নির্ধারণসহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন।

দাবিগুলো হলো- চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৪০০ টাকা প্রদান, রেশন সপ্তাহে ৫ কেজি চাল, প্রতি মাসে ২ কেজি চা পাতা, নিরিখের অতিরিক্ত কাঁচা পাতার দ্বিগুন মূল্য, অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃর্ষ্টি, চা শ্রমিকদের বসতবাড়ি ও কৃষিজমির স্থায়ী মালিকানা প্রদানসহ ২০ মে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘চা-শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালন এবং ওই দিন চা-বাগানে ছুটি ঘোষণা।