দলবেঁধে উইকেট খোয়ানোর প্রবণতা দ্রুত বদলাতে চান সিডন্স

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের শুরুতে ২৫ রানে পাঁচ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায় দল। এমনকি চট্টগ্রামে দারুণ শুরুর পরও এক সেশনে পরপর তিন উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এতে অবাক হয় না বাংলাদেশের  ভক্ত-সমর্থক  থেকে শুরু করে ক্রিকেট বোদ্ধারা। কারণ এমন ঘটনা নতুন নয়। ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটেই ব্যাটারদের এমন একসঙ্গে আউট হওয়ার ঘটনায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে দলের দেশি-বিদেশি কোচরাও। এক সময়ের জাতীয় দলের সাবেক প্রধান কোচ জিমি সিডন্স আবারো ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। তবে তিনি এবার ব্যাটিং পরামর্শক। ২০১১’র  পর ফিরে এসে নতুন মিশনে তার শিষ্যদের অনেক পরিবর্তন আর উন্নতিও দেখেছেন। কিন্তু পরিবর্তন দেখছেন না দল বেঁধে আউট হওয়ার সেই প্রবণতায়

তাই কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে সিডন্স বলেন, ‘আমার মনে হয় এখনও একসঙ্গে উইকেট হারানোর প্রবণতা রয়ে গেছে। এই দিকটাতে কোনো বদল আসেনি। আমাদের এটা দ্রুত বদলাতে হবে। এটা অগ্রহণযোগ্য। এই ম্যাচেই যেমন অল্প রানে পাঁচ উইকেট গেছে। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও এমন হয়েছে। আমাদের এটা দ্রুত বদলাতে হবে। আমার মনে হয় না এটা থেকে বেশি দূরে আছি। কিছু টেকনিক্যাল ও মেন্টাল পরিবর্তন আনলেই আমরা দ্রুত পরিবর্তন দেখতে পাবো।’ তবে টাইগারদের অনেকেরই লম্বা সময় ব্যাট করার  যে সামর্থ্য বেড়েছে তা নিয়ে দারুণ খুশি সিডন্স। তিনি বলেন, ‘তবে এখন লম্বা সময় ব্যাট করার সামর্থ্যটা দুর্দান্ত। এই ম্যাচে মুশফিক, লিটন, এর আগে প্রথম টেস্টে তামিম দারুণ করেছে। এ জিনিসগুলো তখন (২০১১ সালে) খুব একটা দেখা যেতো না। তো এই পরিবর্তনটা এসেছে।’ ১০ বছর পর ফিরে এসে টাইগারদের অনেক পরিবর্তনও দেখতে পাচ্ছেন  এই কোচ। বিশেষ করে মানসিকায় বড় বদল এসেছে বলেই মনে করেন তিনি। সিডন্স বলেন, ‘সত্যি করে বললে, আমি অনেক পরিবর্তন দেখছি, পারফরম্যান্স ও অ্যাটিটিউড দুই দিক থেকেই। তারা এখন অনেক বেশি পেশাদার। আমার মনে হয় সিনিয়ররা এখনও সেরা খেলোয়াড়, লিটনকে বাদ দিলে হয়তো; সে এখন সিনিয়র খেলোয়াড় হওয়ার পথে, অনেক টেস্ট খেলে ফেলেছে। আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় বদলটা এসেছে পেস বোলারদের দিক থেকে। বাংলাদেশের এখন দুর্দান্ত কিছু পেসার আছে। এটা বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলবে।’
এবার টাইগারদের ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করছেন অস্ট্রেলিয়ান এই কোচ। যার সুফলও পাচ্ছে বাংলাদেশ। যেমন চট্টগ্রাম ও ঢাকা টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশফিক সিডন্সের পরামর্শে ফুটওয়ার্কে এনেছেন পরিবর্তন। যা তাকে আড়াই বছর পর টেস্টে সেঞ্চুরি পেতে সাহায্য করেছে বলেই মনে করেন  কোচ। তিনি বলেন, ‘আমরা সৌভাগ্যবান যে চট্টগ্রামে বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেট পেয়েছিলাম। মুশফিক ফ্যান্টাস্টিক প্লেয়ার। তার ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশি কিছু দরকার পড়ে না। আমরা তার প্রস্তুতিতে ছোটখাটো কিছু এডজাস্টমেন্ট এনেছি, তার পা নিয়ে কিছু কাজ করেছি। যা যথেষ্ট মনে হয়েছে। চট্টগ্রামে সে নিজেই পথ খুঁজে নিয়েছে, দারুণ ব্যাট করেছে। আমি মনে করি, এই ম্যাচের সেঞ্চুরিটি তার অন্যতম সেরা ইনিংস। সে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে।’ তবে আগের তুলনায় বাংলাদেশ দলের এখন সিরিজ বেড়েছে। দেশে-বিদেশে দারুণ ব্যস্ত টাইগাররা। তাই লম্বা সময় ব্যাটারদের নিয়ে কাজ করার সময়ও কম পাচ্ছেন কোচরা। সিরিজের মধ্যেই যতটা সম্ভব শিষ্যদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সিডন্স। যা তার জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘এছাড়াও একটি বিষয় হলো এখন কোনো ম্যাচের প্রস্তুতিতে আমি আরও বেশি বল খেলাই না ওদের। আমরা খুব বেশি অনুশীলন করতে পারি না। কারণ, এখন অনেক বেশি ভ্রমণ করতে হয়। তাই এ ব্যস্ত সময়ের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনা কঠিন। ব্যাটিং কোচ হিসেবে আমি এ বিষয়টিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি। দুই ম্যাচের মধ্যে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আনা খেলোয়াড়দের জন্যও কঠিন।’ ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন সিডন্স। তখন থেকেই তিনি বেশ ভালো করে চেনেন তামিম, মুশফিক,সাকিবদের। তখন তারা দলের তরুণ  ক্রিকেটার। এবার যখন আবার এই কোচ  দায়িত্ব নিয়ে ফিরে এসেছেন তখন তারাই দলের সিনিয়র ও সেরা ক্রিকেটার। আর সিডন্সের চাওয়া, বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারের এই শেষ অধ্যায়ের পারফরম্যান্সেও দারুণ কিছু হোক। তিনি বলেন, ‘সিনিয়র খেলোয়াড়দের জন্য আমার কাজটা হলো তাদের পথ সহজ করা। তাদের ক্যারিয়ারের শেষ ৩-৪ বছর অবশ্যই সেরা ফর্মে কাটানো উচিত। গ্রাফটা নিম্নমুখী হলে চলবে না। সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে তাদের ছোটখাটো কিছু এডজাস্টমেন্ট প্রয়োজন। আমরা সেগুলো নিয়েই কাজ করছি।’