সিলেটে নতুন সমস্যায় বানভাসিরা, মিলছে না দাফনের জায়গা

সিলেটে নতুন সমস্যায় বানভাসিরা, মিলছে না দাফনের জায়গা

স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখছে সিলেট অঞ্চলের মানুষরা। চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। উজানের ঢলের সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিলে বানের প্রলয় ঘটিয়েছে সেখানের নদ-নদীগুলো।

সিলেট বিভাগের ৮০ শতাংশ এলাকা এখন পানির নিচে। বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও মহাবিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে লাখো মানুষ। নানা সংকটে জীবন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ।

এরই মধ্যে নতুন এক সমস্যায় পড়েছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ সেখানকার মানুষজন। দাফনের জন্য এক টুকরো শুকনো মাটিও মিলছে না সিলেটের দূর্গত এলাকায়। কেউ মারা গেলে সেই লাশ দাফন করতে কবরের জায়গার জন্য ভেলায় ভাসিয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটতে হচ্ছে স্বজনদের। কোনমতে শেষ করতে হচ্ছে চিরবিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা।

গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম বরনি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেলো এক বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। সোমবার মধ্যরাতে মারা গেছেন বাড়ির সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ আবদুস শহীদ। গ্রামজুড়ে সেই মৃত্যর খবর ছড়ালো। বন্যার অথৈ পানি ভেঙে মানুষটিকে শেষ বিদায় জানাতে এলেন স্বজন-প্রতিবেশিরা। কিন্তু, দাফন হবে কোথায়? আশপাশের কোথাও কবর খোঁড়ার জায়গাটুকু নেই। সবখানেই পানি। অনেক চেষ্টা পর জানা গেলো ভোলাগঞ্জের একটি টিলায় কবরের জায়গা পাওয়া গেছে। সিদ্ধান্ত হলো ১৫ কিলোমিটার দূরের সেই ভোলাগঞ্জেই হবে দাফন। নৌকায় করে জানাযার জন্য লাশ নেয়া হলো পাশের মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানেও হাঁটু পানি। সেই পানিতে দাঁড়িয়েই আবদুস শহীদের জানাজার নামাজ পড়ার পাশাপাশি চিরবিদায়ের আনুষ্ঠিকতা সারলো স্বজন ও এলাকাবাসী।

গন্তব্য এবার ভোলাগঞ্জ। নিজ বাড়ি, নিজ কবরস্থান, নিজ গ্রাম কোথাও ঠাঁই হলো না আবদুস শহীদের। এর জন্য তো দায়ী সর্বনাশা বন্যা। খবর এলো পূর্ব বরনি গ্রামেও আবদুল মালেক নামে একজন মারা গেছেন। তিনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। সেখানেও অসহায়ত্ব। কবর খোড়ার জায়গা নেই। বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গেছে। কাফনের বন্দোবস্ত করতে করতে স্বজনরা অপেক্ষা করছিলেন দুপুর নাগাদ পানি কিছুটা কমলে পাশের একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করবেন।

এমন পরিস্থিতি গোটা সিলেট অঞ্চলজুড়েই। যেখানে বেশিরভাগ এলাকা পানির নিতে সেখানে লাশ দাফনের জায়গা পাওয়া যাবে না, সেটাই তো নিয়তি। মৃত ব্যক্তির দাফনের জন্য সিলেট নগরীর মানিক পীরের টিলার (মাজার) বিকল্প নাই। তবে এখানে কবর দিতে হলে নির্ধারিত ফি দিয়ে কবর দিতে হয়। টাকা দিয়েই কবর খনন করাতে হয় মৃতের স্বজনদের। ফলে, বর্তমানে বন্যা কবলিত প্রত্যন্ত এলাকার কোন গরীব মানুষ মারা গেলে তার দাফন নিয়েও পরিবারের দূর্ভোগের শেষ নেই।

মানবিক এই বিপর্যয়ে কেউ মারা গেলে সরকারি নৌকা করে একটি উঁচু স্থানে লাশ দাফন করার ব্যবস্থার দাবি সিলেট-সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের নাগরিক সমাজের।