মনু নদীর ভাঙন রক্ষা প্রকল্পে অনিয়ম

মনু নদীর ভাঙন রক্ষা প্রকল্পে অনিয়ম

মৌলভীবাজারের মনু নদীর ভাঙন রোধে এবং বন্যার স্থায়ী সমাধানে একনেকের হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ‘মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মুখ কেটে নদীতে বালি ফেলে পুনরায় ব্যবহারের জন্য জিও ব্যাগ সংরক্ষণ করছে। এছাড়া ভাঙন বা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ফেলছে না।

তারা এ কাজটি কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো রাতের আঁধারে করছে। হাতেনাতে এমন অনিয়ম ধরেছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের যোগসাজশে এমনটি হচ্ছে রাজনগর উপজেলার আদনাবাদ এলাকায়। দেশের মানুষ যখন বন্যা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, তখনই মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হরিলুটে ব্যস্ত হয়েছেন। তিনি নিজের এবং ঠিকাদারের আখের গোছাতে মরিয়া।

রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, ওয়ার্ক অর্ডারে জিও ব্যাগ নদীর কিনারে ফেলার কথা থাকলেও নদীর মধ্যখানে ফেলা হচ্ছে। আমাদের ধারণা, নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে এমনটি হচ্ছে।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক লাখ বাসিন্দা। তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে হতাশ।

তাদের অভিযোগ, টাস্কফোর্সের গণনার ১৫ দিনের মধ্যে জিও ব্যাগ নির্ধারিত স্থানে ফেলার নির্দেশনা থাকলেও দুই মাসের মধ্যেও তা করা হয়নি। ফলে ব্যাগের গুণগত মান অনেকটা কমে গেছে। এছাড়া ব্লক নির্মাণে নির্ধারিত (সিলেকশন গ্রেড) বালি ও পাথর ব্যবহার করার শর্ত থাকলেও স্থানীয়ভাবে নদী থেকে তোলা বালু এবং আগে ব্যবহৃত নিুমানের পাথর ব্যবহার হচ্ছে। নির্মিত ব্লকগুলো নিয়ে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ওই প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু দুই বছরে মাত্র ২৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। এর মধ্যেও বেশির ভাগ ভেসে যাচ্ছে নদীর সে াতে।

সরেজমিন সোমবার বিকালে আদনাবাদ গিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, রোববার রাতে এলাকার সুন্দর চৌধুরী ও সাবেক ইউপি সদস্য মাহমুদুর রহমানসহ অনেকেই নদীর মাঝখানে শ্রমিকদের জিও ব্যাগ ফেলতে দেখেছেন। এভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স টাস্কফোর্সের গণনাকৃত হাজারের ওপরে জিও ব্যাগ কখনো বালিসহ, কখনো মুখ কেটে রাতের আঁধারে নদীতে ফেলেছে।

ইউপি সদস্য আব্দুল মন্নান বলেন, তাদের এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে ওপর মহলের ভয় দেখায়। এদিকে নদীর পানি প্রতিরক্ষা বাঁধে ছুঁইছুঁই অবস্থা। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় স্থানীয়রা ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের কাছে যান কিছু জিও ব্যাগের জন্য। কিন্তু ম্যানেজার জিও ব্যাগ নেই বলে তাদের তাড়িয়ে দেন। এ সময় এলাকাবাসী বালির গর্তের ভেতর থেকে আড়াই মাস আগে টাস্কফোর্সের গণনাকৃত জিও ব্যাগ উদ্ধার করেন। তারা পাশের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে টাস্কফোর্সের গণনাকৃত কয়েক হাজার খালি জিও ব্যাগ দেখতে পান।

এলাকাবাসী তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অবগত করেন।

তারা সরেজমিন এসে ঘটনার সত্যতা পান এবং খালি ব্যাগ জব্দ করেন। এমএম বিল্ডার্সের ম্যানেজার সুহান আলী খালি জিও ব্যাগ ঘরে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, এগুলোর গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খুলে রেখেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজনগর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইফতেখার মাহমুদ বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগ সঠিক। কোন অসাধু এ রকম কাজ করল বুঝে উঠতে পারছি না।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্রধর বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই।