বেরিয়ে এলো রিকশা গ্যারেজে বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ

রাজধানীর তুরাগের কামারপাড়া এলাকায় ভাঙারি দোকানে বিস্ফোরণে দগ্ধ একে একে ৮ জনই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

সবশেষ শুক্রবার (১২ আগস্ট) মধ্যরাতে মারা যান শাহিন (২৫) নামে এক রিকশাচালক। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানান চিকিৎসক।

এ ঘটনায় নিহত অন্য সাতজন হলেন ওই ভাঙারি দোকান-সংলগ্ন রিকশার গ্যারেজের মালিক মো. গাজী মাজহারুল ইসলাম (৪৮), শরিফুল ইসলাম (৩২), মো. আলম মিয়া (২০), মো. নূর হোসেন (৬০), মো. মিজানুর রহমান মিজান (৩৫), মাসুম আলী (৩৫) ও আল-আমিন (৩০)।

এর আগে, শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তুরাগের দক্ষিণ রাজাবাড়ির গাজী মাজাহারুল ইসলামের ভাঙারির দোকান ও অটোরিকশার গ্যারেজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, ওই ভাঙারির দোকান ও অটোরিকশার গ্যারেজ একই সঙ্গে। সেখান হঠাৎ করে কয়েক দফা বিস্ফোরণ হয়ে আগুন লেগে যায়। পরে সবার সহযোগিতায় আধা ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টা চালিয়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। এতে গ্যারেজ ও ভাঙারির দোকানের মালিক, অটোরিকশা চালকসহ ৮ জন দগ্ধ হয়েছিলেন।

জানা গেছে, অটোরিকশা গ্যারেজের পাশাপাশি গাজী মাজহারুল ইসলামের একটি ভাঙারির দোকান আছে। সেখানে নিয়মিত ব্যাটারির চার্জ দেয়া হতো এবং কোনো সাবধানতা অবলন্বন না করেই অটোরিকশার ব্যাটারির অ্যাসিড পরিবর্তন করা হতো।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার দিন অনেকগুলো ব্যাটারি ওভার লোডিং চার্জ দেয়া হচ্ছিল।এ সময় গ্যারেজের মালিক চার্জ দেওয়া ব্যাটারিতে অ্যাসিড পরিবর্তন করছিলেন। তখন গ্যারেজের দুই কর্মচারী ধূমপান করছিলেন। ব্যাটারিতে অ্যাসিড ঢালার সময় অসাবধানতাবশত সামান্য অ্যাসিড বিদ্যুতের তারে গিয়ে লাগে, এতে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট হয়ে বিস্ফোরণে গ্যারেজ মালিক মাজহারুলসহ ৮ জন দগ্ধ হন।

বিস্ফোরণের সময় গ্যারেজে থাকা ১৩টি অটোরিকশা এবং অনন্য মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বিস্ফোরণ ঘটার পর উত্তরা ফায়ার স্টেশনের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম তিনটি টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পরবর্তীতে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে সেগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়, শর্ট সার্কিট থেকে ব্যাটারি বিস্ফোরণে আগুন লাগে।

প্রতক্ষ্যদর্শীরা আরও জানান, আগুন লেগে ১৩টি আটোরিকশাসহ সব মালামাল পুড়ে গেলেও পার্শ্ববর্তী ভাঙারির দোকানে রক্ষিত নন-এলকোহলিক ‘ড. রাযেস’এর জার্মকিল কিল স্প্রে কৌটালো অক্ষত ছিল।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ১০ আগস্ট অটোরিকশা গ্যারেজের মালিকের ভাই নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে তুরাগ থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।

তুরাগ থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, ফেলে দেওয়া পুরোনো মালামাল ছিল দোকানে। সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ নানা দাহ্য পদার্থও ছিল। সেখান থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলম তার শ্বশুর রফিককে এবং নূর হোসেন তার ছেলে নাজমুলকে মৃত্যুর আগে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ জানান।

স্থানীয়রা জানান, একই রিকশা গ্যারেজে গত বছরও শর্ট সার্কিট হয়ে একজনের মৃত্যু হয়।