কুদরতের বিশেষ নিয়ামত পানি

মহান আল্লাহ বলেন, ওয়া জাআলনা-মিনাল মায়ি কুল্লা শাইয়িন হাইয়্যি অর্থাৎ প্রাণবান সব কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে (সূরা আল-আম্বিয়া ২১:৩০)। আর সেই সময় আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর; আল্লাহতায়ালা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন পানএ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত মোহাম্মদ (সা.) বলেন, সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে নুর থেকে। সুতরাং প্রতীয়মান হয় যে পানিই নুর। তাই সৃষ্টির ফরমুলা হচ্ছে নুরুন আলা নুর অর্থ নুরের ওপর নুর। আমরা যেখান থেকে এসেছি সেখানে ফিরে যেতে হবে এর একটি অর্থ এমনও হতে পরে, পানি থেকে এসেছি পানিতে ফিরে যেতে হবে।

প্রাথমিক উপাদান চারটি পানি, মাটি, বাতাস ও আগুন। পানি থেকেই বাকি তিনটির সৃষ্টি। সূত্র হচ্ছে পানি থেকে বাতাস আর বাতাস থেকে আগুন তারপর মাটি। পানি আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলি। বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন রূপে পানি বিদ্যমান তেমনি মানবদেহের সর্বত্র পানি বিদ্যমান। আর আগুন, পানি, মাটি ও বাতাসের সম্মিলনে এই জড় দেহ।

আর এ জড় দেহকে পরিচালনা করে মহাশক্তির বিচ্ছুরিত শক্তি রুহ। রুহের শক্তিতে শক্তিমান হয়ে জড় দেহ জীবিত দেহ। জড় দেহ থেকে রুহ বের হয়ে যাওয়া হচ্ছে মৃত্যু। তখন জড় দেহ আবার আগুন পানি মাটি বাতাসে পরিণত হয়। জড় রূপান্তরিত হয়ে আবার পানিতে মিশে যাচ্ছে। এ তো রূপান্তরের খেলায় লয় প্রলয়। এভাবেই চলমান বৃত্ত।

মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে চিন্তা করেছ কি (৫৬:৬৩)? একটু ভাবুন আপনি যে বীজ থেকে তৈরি সে রকম আপনিও কি বীজ বপন করেছেন? যদি করেন তাহলে তো আপনি আমানত রক্ষা করলেন। তাই তো স্রষ্টা বলেন : তোমরা কি ভেবে দেখেছ তোমাদের বীর্যপাত সম্বন্ধে (৫৬:৫৮)?

একবিন্দু পানি থেকে সৃষ্টি বর্তমানের এ বিশাল দেহটি শক্ত পাথরসম। পাথর যেমন পথ রোধ করে তেমনি পাথরের মতো মানুষও অন্যের চলার পথের বাধা সৃষ্টিকারী হতে পারে। দেহের ওজন ও কাঠিন্য মানুষের মনকেও কঠিন করে ফেলে। ফলত শিলারূপী এ মানুষ তার কাঠিন্য দিয়ে নষ্ট করতে পারে এ সুন্দর পৃথিবীকে অথবা মানুষ পানির গুণাবলি ধারণ করে নিজেকে পানির মতো নম্র করে সবার জীবনরক্ষায় সহায়ক হতে পারে।

পানি যেমন বহু পথ সৃষ্টি করতে পারে তেমনি পানির গুণাবলি ধারণকারী মানুষও পথের বাধা না হয়ে পথ সৃষ্টিকারী হতে পারে। পানির গুণে গুণান্বিত হতে পারলে জড়মুক্ত হয়ে শক্তিতে অবিচল থাকা যাবে। এখানে সার্থকতা।

তোমরা যে পানি পান কর সে সম্পর্কে তোমরা ভেবে দেখেছ কি (৫৬:৬৮)? দুনিয়ার এ ময়লাযুক্ত পানিকে সংশোধিত করে তোমাদের কে পান করায়? আমরা কি সেই পানি নিয়ে চিন্তা করি, না অপচয় করি। পানি প্রকৃতি। সুতরাং প্রকৃতি ধ্বংস করবেন না, তাহলে আপনিও ধ্বংস হয়ে যাবেন।

মহান আল্লাহ উৎসারিত করেন পানির প্রস্রবণ (৩৬:৩৪)। বিশ্ব জগতের পানির প্রস্রবণগুলো আল্লাহর নিয়ামত। তাই দেশ ভ্রমণ করে সেই নেয়ামতের আস্বাদন গ্রহণ করবেন। পবিত্র কুরআনে রয়েছে রহস্যপূর্ণ ১২টি প্রস্রবণের তথ্য। মূসা তার সম্প্রদায়কে এ ১২ প্রস্রবণের সন্ধান দিয়েছেন।

মহান স্রষ্টা বলেন : আমি মূসার কাছে প্রত্যাদেশ পাঠালাম, তোমার স্বীয় লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর, ফলে ওটা থেকে ১২টি প্রস্রবণ উৎসারিত হলো, প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পানস্থান জেনে নিল (৭:১৬০)। রহস্যপূর্ণ আয়াত? প্রথমত লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত করলেন। দ্বিতীয়ত ১২টি প্রস্রবণ চিনে নিল ১২টি গোত্র। এ আয়াতের আফাকি ও আনফাসি অর্থ নিয়ে ভাবুন। এই ১২ ধরনের মানুষের মধ্যে আপনি এক ধরনের মানুষ।

সম্ভবত ১২ ধরনের মানুষ নিশ্চয়ই ১২ মাসে জন্ম নেয়। মূসার সম্প্রদায় তো বারটি প্রস্রবণ চিনে নিয়েছিল। আপনি চিনেছেন কি? প্রশ্ন থেকে যায় আপনার জন্য কোন প্রস্রবণ? প্রস্রবণের নামই তার গুণের প্রকাশ করে। যেমন সালসাবিল বা জানজাবিলা যা আদ্রকের ঘ্রাণযুক্ত পানি।

এভাবে ১২টি প্রস্রবণের নামও পবিত্র ঔশী গ্রন্থে রয়েছে এবং নাম গুণের প্রকাশক বিধায় নামের মাধ্যমে ১২টি প্রস্রবণ চিহ্নিত করা সম্ভব। রহস্যময় প্রস্রবণ নিয়ে বলা হয়েছে, ‘পান কর এবং বিতরণ করো কিন্তু অপচয় করো না’। এমন ঝরনা বা প্রস্রবণ যা থেকে আল্লাহর বান্দারা পান করবে, যাকে (প্রস্রবণকে) তারা (বান্দারা) যথেচ্ছা প্রবাহিত করে নিয়ে যাবে। আমি পবিত্র ঐশী গ্রন্থে পানি সংক্রান্ত মোট ১৯০টি আয়াত পেয়েছি যা একত্রিত করেছি যেখানে ১২টি প্রস্রবণের নাম পাওয়া যায়।

যা জানলে বিজ্ঞানময় আল কুরআন যে মিরাকেল তা আপনার কাছে প্রমাণিত হবে। যা আপনাকে ইমানের অটলতায় এনে মুমিন বানিয়ে দেবে। এসব রহস্য ভেদ করে নিজেকে আয়াতের আলোকে সাজান। ভেবে দেখুন, যারা আনফাসে আয়াত খুঁজে পায় সেই মানুষকে আয়াতুল্লাহ বলা হয়। তারা কারা?

মহান আল্লাহতায়ালা বলেন : সত্বরই আমি (আল্লাহ) তাদের (মানুষদের) আমার নিদর্শনাবলি (আয়াত) প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের (দেহের) মধ্যে; ফলে তাদের কাছে ফুটে উঠবে যে, এ কুরআন সত্য। আপনার পালনকর্তা সর্ব বিষয়ে সাক্ষ্যদাতা, এটা কি যথেষ্ট নয়? সূত্র : আল কুরআন ৪১ঃ৫৩।

স্রষ্টার রাজ রহস্যের উন্মোচনে আফাক তথা বিশ্ব জগতের আয়াত বা নিদর্শনগুলো আনফাসে তথা নিজের মধ্যে খুঁজুন, তাহলে আপনিও নিজের মধ্যে আয়াত খুঁজে পাবেন। ভাবুন! এই তাফাক্কুর বা গভীর চিন্তা আপনাকে স্রষ্টা ও সৃষ্টির নিগুড় রহস্য জানাবে।