প্রবীণ বয়সে হাঁটুর বাত ব্যথার ধরন ও করণীয়

জেরিয়াটিক্যালি বা বয়স্কজনিত শারীরিক পরিবর্তন সবারই হয়ে থাকে। বয়স্ক হলেই আপনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যাবেন, অনেকের অবহেলার পাত্র হয়ে যাবেন তা কিন্ত নয়। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে আজকাল বয়স্ক ব্যক্তিরাও কিছু নিয়ম মেনে চলে ও সুচিকিৎসা নিয়ে ভালো আছে। বয়স্কজনিত কারণে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাইয়ের মধ্যে অন্যতম হলো হাঁটুর বয়স্কজনিত বাত (Knee osteoarthritis/OA)। মূলত হাঁটা-চলা করার সময় হাঁটু শরীরের ওজন বহন করে এবং হাঁটু বেশি ব্যবহৃত হয় বলে এই ব্যথার প্রভাব পড়ে। হাঁটুর বয়স্কজনিত বাতের ধরন ঙ স্বাভাবিক হাঁটু (Stage-I): কোনো ব্যথা বা অন্যানসামান্য বাত (Stage-II or Minor osteoarthritis): 

খুব সামান্য নতুন সুচালো হাড় (Bone spurs) গজায়, জয়েন্ট স্পেস (ফাঁকা জায়গা) কমতে থাকে এবং কার্টিলেজ-এর পরিমাণ ১০% কমে যায়। এই স্টেজে হাটুতে কোনো ব্যথা হয় না। ফিজিওথেরাপি যেমন- মাংসপেশি/জয়েন্ট শক্তিশালী করার এক্সারসাইজ) এবং জীবন-যাপনের ধরন পরিবর্তন করা। (যেমন- ওজন কমানো, স্বাস্থসম্মত খাবার খাওয়া ইত্যাদি) যাতে বাতজনিত পরিবর্তন দ্রুত খারাপের দিকে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ওষুধ বা ইঞ্জেকশনের কোনো প্রবিশেষকরে বার বার আঘাত (Repetitive micro-trauma) থেকে জয়েন্টকে রক্ষা (Protection) করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর উপশমে হয়তো আপনি ফিজিওথেরাপি সেশন নিয়ে হয়তো আপনি ১০% উপকার পেলেন, এখন সেটা ধরে রাখতে হবে, ১৫% নষ্ট করে ফেলবেন না। এজন্য যেসব কাজে বার বার হাঁটুর আঘাত হবে সেগুলোর ‘গড়ফরভরপধঃরড়হ’ বা ধরন পরিবর্তন করতে হবে। মৃদু বা অল্প বাত ব্যথা হলে (Stage-III or Mild osteoarthri

 উপরের লক্ষণগুলো আরও একটু বেশি হবে, হাঁটুর মুভমেন্ট কমে যাবে (Joint stiffness) (বিশেষ করে সকালে), অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা, সিঁড়িতে ওঠা-নামা করে, ওজন বহন করা এবং হাঁটু ভাঁজ করে কাজ করতে গেলে ব্যথা অনুভব হবে। ট্রিটমেন্ট: 

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা (যেমন: ব্যথা কমানোর বিভিন্ন মডালিটিজ, স্ট্রেচিং/ফ্লেক্সিবিলিটি/ রেঞ্জ অফ মোশন এক্সারসাইজ, মোবিলাইজেশন/ম্যানুপুলেশন, স্ট্রেনদেনিং বা মাংসপেশি/জয়েন্ট শক্তিশালী করার এক্সারসাইজ এবং ম্যানুয়াল থেরাপি) এবং জীবন-যাপনের ধরন পরিবর্তন করা (যেমন: ওজন কমানো, স্বাস্থসম্মত খাবার খাওয়া ইত্যাদি) যাতে বাতজনিত পরিবর্তন দ্রুত খারাপের দিকে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। খুব বেশি ব্যথা বা প্রয়োজন না হলে, ওষুধ বা ইঞ্জেকশনের (সাধরণত স্টেরোয়েড) কোনো প্রয়োজন নেই, বা খেলেও সেটা শুধুমাত্র স্বল্প সময়ের জন্য। জানতে হবে ব্যথার ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক এবং স্টেরোয়েড ইঞ্জেকশন, আপনার ব্যথা সাময়িকভাবে কমালেও, হাড় দ্রুত ক্ষয় করবে এবং বাতের গতি আরও দ্রুতমাঝারি রকমের বাত (Stage- 4or Moderate osteoarthritis):

 যদি দেখেন উপরোক্ত সমস্যা আরও বাড়তে থাকে। ঘন ঘন ব্যথা হয় এবং ব্যথার তীব্রতা আরও বাড়তে থাকে, সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বা জয়েন্টের রস ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জয়েন্ট ফুলে (Swelling) যেতে চিকিৎসা: 

উপরোক্ত চিকিৎসা। অনেক সময় অনেকে সার্জারি (যেমন: আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি) কিন্ত সার্জারির দীর্ঘমেয়াদি কোনো উপকারিতা নেই, বরং এটা নানাবিধ উপসর্গ তৈরি করবে এবং আপনার দৈনন্দিন কাজের নানারকম সীমাবদ্ধতা তৈরি করবে।তীব্র বা প্রচণ্ড রকমের বাত (Stage-v or Severe osteoarthritis):

 উপরোক্ত লক্ষণগুলো আরও বাড়তে থাকে এবং জয়েন্টের কার্যক্ষমতা আরও অনেক কমে যায়। ৬০% বা তারও বেশি কার্টিলেজ নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসা বা করণীয়- উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা এবং ওষুধ বা ইঞ্জেকশন নিতে হবে। যদি একন্তই ব্যথা এবং অন্যান্য সমস্যা কমানো না যায় তবে সার্জারি (যেমন: হাঁটু কেটে ফেলে, কৃত্রিম হাঁটু লাগানো, Total Knee Arthroplasty or Total Knee Replacement surgery) করা লাগতে পারে। সঠিক পুনর্বাসন এবং দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সার্জারির আগে এবং পরে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে।