রপ্তানি খাতে ঋণের তহবিল ১০ হাজার কোটি টাকা

বৈশ্বিক মন্দা মোকাবিলায় রপ্তানি খাতের সহায়তায় কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণের জোগান দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও একটি তহবিল গঠন করক্রেতার কাছ থেকে রপ্তানির কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতে এই তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের টাকায় ঋণ দেওয়া হবে।

সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দেওয়া হবে। এই ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া চার্জ বা কমিশনের বেশি কোনো ফি বা কমিশন আদায় করা যাবে না। 

নতুন গঠন করা ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে রপ্তানিকারকদেরকে কাঁচামাল আমদানির জন্য টাকায় ঋণ দেওয়া হবে। টাকায় ঋণ নিয়ে পরে তারা সেগুলো বৈদেশিক মুদ্রায় রূপান্তর করে এলসি খুলতে পারবেন। ফলে এটি ইডিএফের বিকল্প তহবিল হিসাবে কাজ করবে। 

এ বিষয়ে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ তহবিলের কার্যক্রম অবিলম্বে কার্যকর হবে। নতুন তহবিলের নাম দেওয়া হয়েছে রপ্তানি সহায়ক প্রাক অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএ)। 

সূত্র জানায়, রপ্তানি খাতকে সহায়তা করতে বর্তমানে আরও দুটি তহবিল চালু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ৭০০ কোটি ডলারের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), ৫ হাজার কোটি টাকার প্রাক জাহাজীকরণ তহবিল।

এ ছাড়া দেশীয় শিল্প ও রপ্তানিমুখী শিল্পের যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামাল আমদানির জন্য রয়েছে আরও তিনটি তহবিল। এর মধ্যে ২০ কোটি ডলার তহবিল, ২০ কোটি ইউরো তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় রয়েছে আরও একটি তহবিল।

ইডিএফ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় রপ্তানি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য ঋণ দেওয়া হয়। এর চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু আইএমএফ এ তহবিলের আকার ছোট করতে বলেছে। এছাড়া বিভিন্ন তহবিলে বরাদ্দ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে বলেছে।

এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত বাকি তিনটি তহবিলের ব্যবহার কম। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত তিনটি তহবিলের আকার ছোট করে আনছে। প্রাক জাহাজীকরণ তহবিলের ব্যবহার কম হওয়ায় এর বিভিন্ন শর্ত শিথিল করেছে। 

সার্কুলারে বলা হয়, এ তহবিল থেকে যেসব ব্যাংক ঋণ নিত আগ্রহী তাদেরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আগামী ২২ জানুয়ারির মধ্যে চুক্তি করতে হবে। এ তহবিল থেকে অর্থ নিলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে দেড় শতাংশ সুদ দিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

এর বিপরীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংক ৪ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে। এটি একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল হবে। তহবিলের বিনিয়োগ থেকে সুদ আদায় হয়ে এর আকার বাড়ানো হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ তহবিলের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

সরাসরি রপ্তানিকারক ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকরা এ তহবিল থেকে ঋণ পাবেন। বস্ত্র, পোশাক, নিটওয়্যার শিল্পের উদ্যোক্তারা ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানি করতে যে অর্থের প্রয়োজন হবে তার পুরোটাই ঋণ হিসাবে পাবেন।

তবে ২০০ কোটির বেশি ঋণ দেওয়া যাবে না। স্থানীয় ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিপরীতে সর্বোচ্চ ১৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া যাবে। ঋণের একটি কিস্তি পরিশোধের পর আবার ঋণ নেওয়া যাবে।

তবে নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কোনো কারণে রপ্তানির মূল্য দেশে না এলে দ্বিতীয় দফায় ঋণ নিতে পারবেন। প্যাকেজিং শিল্পের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা, প্লাস্টিক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা, সিরামিক খাতের উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ ৭ কোটি টাকা এবং অন্য রপ্তানিকারকদেরকে সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া যাবে। 

ঋণের মেয়াদ হবে ছয় মাস। তবে যৌক্তিক কারণে রপ্তানির মূল্য দেশে না এলে এর মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানো যাবে। 

এতে আরও বলা হয়, কোনো ঋণখেলাপি আলোচ্য তহবিল থেকে ঋণ পাবেন না। ঋণ গ্রহীতাদের সার্বিক ঝুঁকি ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো ব্যাংক বিশ্লেষণ করে গ্রাহক বাছাই করবেন।