সিলেটে ‘কিশোর গ্যাং’ ফের সক্রিয়

সিলেট নগরীর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা। কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম আস্তানা। ওই এলাকাতেই আছে কয়েকটি কিশোর গ্যাং। ওরা বেপরোয়া। ইতিমধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে দু’টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কিশোর গ্যাংসের সদস্যরা প্রকাশ্য কুপিয়ে এসব খুন করেছে। তাদের হাতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এরপর পুলিশ ও র‌্যাব’র পক্ষ থেকে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের মধ্যে চিহ্নিত ১০-১২ জনকে আটক করেছিল। এতে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তবে- সম্প্রতি তারা এসে ফের আস্তানা গেড়েছে মআগের মতো দিচ্ছে আড্ডাও। মাদক, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। মেডিকেল এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। ২০১৮ সালের শেষদিক থেকে সিলেটে কিশোর গ্যাংয়ের সৃষ্টি হয়। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নামে কিশোররা সংঘবদ্ধ হয়ে নানা ঘটনা ঘটাতে শুরু করে। এক সময় নগরের টিলাগড়ে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত বেশি ছিল। পুলিশ ও র‌্যাবের অভিযানের কারণে ওদের আস্তানা ভেঙে যায়। এখন টিলাগড় শান্ত হলেও নতুন করে কল্যাণপুর, শাপলাবাগে দুই-তিন গ্রুপের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। সিলেট নগরীর মেডিকেল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত বছর নাজিম নামের এক হোটেল শ্রমিককে কুপিয়ে খুন করা হয়। সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের জের ধরে নাজিমকে কোপানো হয়েছিল। এ ঘটনার পর পুলিশ ও র‌্যাব অভিযানে নেমে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। মেডিকেল এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মেডিকেল এলাকা পুরোটাই কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। ইমার্জেন্সি ফটক, আলবাহার গলি, শাপলার পেছন, মনিকা সিনেমা হলের সামনে, শামীমাবাদ, ঘাষিটুলা, বাগবাড়ি, পশ্চিম শেখঘাট, মেডিকেলের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা, নার্সিং হোস্টেল এলাকা সবই ছিল কিশোর গ্যাংয়ের দখলে। গত বছর নাজিম খুনের ঘটনার আগে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে ডন হাসান নামের আরও এক যুবক খুন হয়েছিল। মেডিকেল ফটকের কাছে ফুলকলির সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এ ছাড়া নার্সিং কলেজ ও হোস্টেল এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সব সময় বসে আড্ডা দেয়। সেখানে তারা মাদকের আস্তানা গড়ে তুলেছে। একইসঙ্গে ছিনতাইও করে তারা। সাম্প্রতিক সময়ে মেডিকেলের ১নং রোড এলাকায় কয়েকটি চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে একই কারণে কাজলশাহ এলাকার কিশোরদের সঙ্গে মেডিকেল ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। কিশোর গ্যাং নগরীর আম্বরখানা, বড়বাজার, ইলেকট্রিক সাপ্লাই, কাজিটুলা, কুমারপাড়া, টিলাগড়, শিবগঞ্জ, নয়াসড়ক, মিরাবাজার, ভাতালিয়া, লামাবাজার, মেডিকেল রোডসহ বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সিলেট মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা থামাতে এসএমপি’র ৬টি থানায় তালিকা তৈরি করা হয়েছে ২২০ জন কিশোরের। কয়েক দিন আগে বদলি হওয়া পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফের নির্দেশে এলাকাভিত্তিক ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে কথিত বড় ভাইয়েরা এদের আশ্রয় দিয়ে থাকেন। ‘কিশোর গ্যাং’ এখন বড় ধরনের একটি সামাজিক সমস্যা। মেট্রোপলিটন পুলিশের তালিকা অনুযায়ী ১৫-২০টি ‘কিশোর গ্যাং’ নগরীতেই রয়েছে। যাদের সদস্য অন্তত আড়াইশ’র উপরে। যাদের মধ্যে ২২০ জনের তালিকা এখন মেট্রোপলিটন পুলিশের হাতে রয়েছে। তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। এদিকে- স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক শেল্টারে থাকার কারণে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের কাছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অসহায়। বরং অনেক এলাকায় পুলিশ নিস্ক্রিয় রয়েছে। এতে করে চলতি রমজানে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। সন্ধ্যার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত নগরে ফের মহড়ায় নেমেছে এ চক্রের সদস্যরা।