এরদোগানের নারী ভোটাররা এখন ‘তুর্কি গান্ধী’র প্রেমে

দিন সবসময় সমান যায় না। আজ যে খুব কাছের কাল সে বহুদূরেঅটোমানদের দেশ তুরস্কের টানা দুই দশকের অধিপতি, ভোটার সমর্থকদের চোখে দেশের ‘অপরাজিত নায়ক’ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের (৬৯) দ্বিতীয় দফার দৌড়েও এবার পাহাড়সমান দেওয়াল হয়ে দাঁড়াল এই অপ্রিয় সত্যটি!

ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেই চোখে পড়ে-২০ বছর আগে, ১৯৯০ দশকের মেয়র নির্বাচন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০১৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত সবসময় তার পাশে ছিলেন নারী ভোটাররা। তুলনা চিত্রের কষ্টিপাথরে দেখলে পুরুষের চেয়ে নারী সমাজেই বেশি জনপ্রিয় ছিলেন সে সময়ের মাঝবয়সি এরদোগান।

ভাগ্যের কী করুন কশাঘাত-বছরের পর বছর ধরে তুর্কি জনপদের অন্দর মহলে নায়ক হয়ে থাকা নয়নমণিই আজ চক্ষুশূল! পশ্চিমা গণমাধ্যম বলছে, ‘নারীরা এবার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। রোববারের (২৮ মে) দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন না এরদোগানকে। তারা এখন ‘তুরস্কের মহাত্মাগান্ধী’ খ্যাত মৃদুভাষী কামাল কিলিচদারোগ্লুর (৭৪) প্রেমে অন্ধ!’

সব মিলিয়ে গলি-ঘুপচির গুঞ্জনে এরদোগান আবার প্রেসিডেন্ট হলেও ‘ঘরের’ খবর ভালো নয়! চাপের মুখে রয়েছেন। ভয়ংকরভাবেই রয়েছে। অথচ এবারের নির্বাচনই তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় লড়াই। বাঁচা-মরার লড়াই। রাজনীতির শেষ পরীক্ষা। এর একমাত্র কারণ হিসাবে এরদোগানের দরজা থেকে নারী সমাজের পিছু হটে যাওয়াকেই দেখছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তুরস্কের মোট ভোটারের অর্ধেকই নারী। ভোট ব্যাংকের বিরাট এই অংকে বিশ্বাসের ফাটল ধরেছে। ভক্তির বদলে ভয় জন্মেছে। আনুগত্য ছেড়ে হাঁটছে বিদ্রোহের দলে। গড়মিল হয়ে গেছে এরদোগানের হিসাব। নারীরা এখন এতটাই ক্ষীপ্ত যে, ইস্তাম্বুলের একটি বাজারে স্ট্রবেরি এবং জলপাইয়ের একটি আড়াল থেকে নারীরা বলেছে, ‘আসুন এরদোগানের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাক।’ তুরস্ক মুসলিম রাষ্ট্র। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ এই প্রজাতন্ত্রের দেশে এরদোগানের ধর্মের ওপর থেকে বিধিনিষেধ অপসারণ তাকে তুরস্কের রক্ষণশীলদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। গৃহিণীদের দেওয়া হয়েছিল ইচ্ছানুযায়ী বোরখা পরার স্বাধীনতা। আর তাই তাদের সমর্থন অর্জন করেছিল ব্যাপক। এরদোগানের স্ত্রী এমিন এরদোগান ছিলেন

রাজনৈতিক ইসলামের এই বিশাল তৃণমূল নেটওয়ার্কের অন্যতম নেতা। প্যারিসের সিইআরআই-সায়েন্স পো’র এক রাষ্ট্রবজ্ঞানী প্রুনেল আইমে বলেন, ‘এরদোগান বিশ্বাস করতেন দলের নারী কর্মীরাই নারীদের বাড়ি গিয়ে তাদের ভোট দিতে রাজি করাতে পারে।’ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু ছোট ছোট কারণে তিক্ত হয়ে উঠেছেন নারীরা। বেড়েছে অনীহা। কিছুটা রাজনৈতিক। বাকিটা সাংসারিক। এক কথায় আর্থিক। গত পাঁচ বছরে তুরস্কের লিরা দ্রুত তার মূল্য হারিয়েছে। নারীরা এখন তুরস্কের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটে দ্রব্যমূল্যের দামের প্রতিও যথেষ্ট সংবেদনশীল। তাই অনেকেই এখন কিলিচদারোগ্লুমুখী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে কিলিচদারোগ্লু অনুসারী এক নারী বলেন, ‘আমরা তাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি যে এমনকি (এরদোগান এবং তার দল) ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকলেও, তারা এখনো পুরোপুরি জয়লাভ করতে পারেনি।

এরদোগান পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে কুর্দি ইসলামিক দলের সাথে একটি বিতর্কিত জোট তৈরি করেছিলেন। প্রথম দফায় এরদোগানকে সমর্থন করা ৫০ বছর বয়সি সিজেম এনার বলেন, ‘তুরস্ক ধর্মনিরপেক্ষ’। আরও বলেন, ‘এরদোগান, আমাদের শোকাবহ অবস্থার দিকে তাকান, তার হুদা-পার বন্ধুদের (কুর্দি) পার্লামেন্টে নিয়ে আসুন।’ এনার এখন এতটাই ক্ষুব্ধ যে, তিনি এখন কিলিচদারোগ্লুকে ভোট দেবেন। এরদোগানের দলে কট্টরপন্থি ইসলামিক ব্যক্তিত্বরা অন্তর্ভুক্ত থাকায় দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আরেক নারী তাজিয়নে আল্পানলিও। তিনিও কিলিচদারোগ্লুকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেন।