প্রতিশোধ নিতেই বড়লেখায় স্কুলছাত্র হাসনকে কুপিয়ে হত্যা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহ হাসান (১৪) হত্যার ঘটনায় জড়িত তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক এরশাদ মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার (২৩ মে) বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়েল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান জামানের খাসকামরায় এ হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এরশাদ। ক্লুহীন এ হত্যা মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের পর ঘটনার তিন মাসের মাথায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শিবিরুল ইসলাম হত্যার রহস্য উদঘাটন করেন। আবদুল্লাহ হাসান উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের সৌদি আরবপ্রবাসী আবদুর রহিমের ছেলে। সে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মনির আহমদ একাডেমির নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। জানা গেছে, গত ১৮ জানুয়ারি রাতে আবদুল্লাহ হাসান বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়। ছেলে নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে ২৩ জানুয়ারি দেশে ফিরেন আবদুর রহিম। নিখোঁজের ১০ দিন পর ২৮ জানুয়ারি রাতে মোহাম্মদনগর এলাকার একটি নির্জন টিলার ঢালু স্থানে আবদুল্লাহ হাসানের খণ্ডিত পচা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি নিহত আবদুল্লাহ হাসানের বাবা তিনজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। পরদিন পুলিশ আব্দুর নূর বলাই (৫০), তার ভাই বদরুল ইসলাম এবং বাদীর ভাতিজা তারেক আহমদকে (২২) গ্রেফতার করে। হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ আসামিদের তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর আলম জানান, আসামিদের রিমান্ড শেষে স্কুলছাত্র হাসান হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়। মৌলভীবাজার পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর শিবিরুল ইসলাম জানান, গাড়িচালক এরশাদ মিয়া খুব ঠাণ্ডা মাথায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটালেও সে থেকেছে সন্দেহের ঊর্ধ্বে। তার তিনটি কর্মকাণ্ডকে প্রাধান্য দিয়ে পিবিআই অগ্রসর হয়। ঘটনার রাতে গাড়িচালক এরশাদ সচরাচর যেখানে ঘুমায় সেখানে না ঘুমিয়ে অন্যস্থানে ঘুমিয়েছে। ঘটনার কয়েক দিন আগেই স্ত্রী-সন্তানদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া। ঘটনার পর চাকরি ছেড়ে দেয়া, মুখে দাড়ি রাখা এবং আত্মগোপন করা। এসব সন্দেহজনক কারণে তাকে আটকের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ১৯ মে মৌলভীবাজার বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন একটি হোটেল থেকে তাকে আটক করা হয়। পরদিন আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু তিন দিনের মাথায় সে স্কুলছাত্র আবদুল্লাহ হাসান হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি প্রদান করে। উল্লেখ্য, গাড়িচালক এরশাদ মিয়া ভোলা জেলার শশীভুষন থানার চরমায়া গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে। সে বড়লেখায় নিহত আবদুল্লাহ হাসানের বাবার প্রাইভেটকারের চালক ছিল। তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, আদালতে স্বীকারোক্তিতে এরশাদ মিয়া জানিয়েছে, ঘটনার প্রায় তিন মাস আগে স্কুলছাত্র হাসান তাকে চড় মারায় সে খুব অপমান বোধ করে। তখন থেকেই সে হাসানকে হত্যার পরিকল্পনা নেয়। জরুরি কথা বলবে বলে তাকে নির্জন টিলায় নিয়ে খাসিয়া দা দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।