ট্রেন দুর্ঘটনা: মাইকিং শুনে ছুটে আসে ‘নারী-পুরুষ’

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা কবলে পড়ে ৬ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় কবলিত ট্রেনের খবর পেয়ে স্থানীয়রা উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভেঙে পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেন নারীরাও। রোববার (২৩ জুন) দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশনের পাশে ইসলামাবাদ এলাকায় বরছড়া রেলব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও স্টেশন থেকে যাত্রী তুলে বরমচাল স্টেশন পার করে। এসময় স্টেশনের নিকটবর্তী ইসলামাবাদ এলাকায় বরছড়া রেলব্রিজে এসে ট্রেনের পেছনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়। সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। এসময় ট্রেনের দুইটি বগি রেলব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ যাত্রীদের চিৎকার শুনে পার্শ্ববর্তী বরমচাল বাজারে অবস্থানরত স্থানীয় বাসিন্দা এগিয়ে আসেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্থানীয় মসজিদে মাইকিং করে উদ্ধার কাজে নামেন এলাকাবাসী। মাইকিং শুনে ঘর ছেড়ে ঘুম ভেঙে উদ্ধার কাজে নামেন নারী-পুরুষ উভয়ে। স্থানীয় বাসিন্দা শিপন চৌধুরী বলেন, আমি তখন ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ করে বিকট শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বের হয়ে দেখি মানুষজন চিৎকার করছেন আর একটি ট্রেন থামানো। দৌড়ে এসে দেখি উপবনের দু'টি বগি ব্রিজ ভেঙে পড়ে আছে আরো দুইটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে আছে। সাথে সাথে যাত্রীদের আমরা বগি থেকে বের করে আনার কাজে নামি। ৫-১০ মিনিটের মাথায় স্থানীয় অর্ধ শতাধিক মানুষ এসে উদ্ধার কাজে নামেন। হঠাৎ দেখি অনেক স্থানীয় নারীরাও উদ্ধার কাজে নেমেছেন। এদিকে উদ্ধার করে আহতদের হাসপাতালের নেওয়ার জন্য এলাকার প্রায় ৩০টি অটোরিকশা ও অন্যান্য যানবাহন কাজ করেছে। অটোরিকশা চালক সেন্টু মিয়া জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বরমচাল স্ট্যান্ডের সব সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের ফোন করে ঘুম থেকে জাগিয়ে নিয়ে আসি। আমরা সবাই মিলে আহতদের হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছি। স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছার আগেই আমরা এলাকাবাসী মিলে প্রায় ৫০ ভাগ মানুষকে উদ্ধার করে ফেলি। পরে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য বাহিনী এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। আমরা তখনো তাদের সাহায্য করেছি। এলাকার মানুষ এগিয়ে না এলে নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তো বলে জানান তিনি। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের চ বগির যাত্রী চাঁদপুর জেলার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, এলাকার মানুষের সহায়তায় আমরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। তারা এসে আমাদের উদ্ধার করে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। অক্ষতদের নিজেদের বাড়িঘরে আশ্রয় দিয়েছেন। আমরা তাদের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। স্থানীয়দের এমন স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণের প্রশংসা করেছে পুলিশ। কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমরা খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে দেখেছি স্থানীয়রা এক-দু'জন করে যাত্রীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসছেন। এটা সত্যিই প্রসংশনীয়। পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকেও তারা সহায়তা করেছেন।