সিলেট-আখাউড়া রেলপথে দশ হাজার ক্লিপ-হুক গায়েব

মৌলভীবাজার প্রতিবেদক : বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট-আখাউড়ায় রেলপথের ৮৯ কি.মি দূরত্বের রেল লাইনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রেলপথ থেকে অব্যাহতভাবে চুরি হচ্ছে ক্লিপ-হুক। রেল লাইনের সাথে সংযুক্ত ক্লিপ-হুক চুরির ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে রেল লাইন। বরমচাল এলাকায় উপবন ট্রেন দুঘর্টনার পর রেলের গাফলতি ও ক্লিপ-হুক চুরির ঘটনা নজরে এসেছে। সিলেট-আখাউড়া রেলপথের ভানুগাছ রেলষ্টেশন থেকে শমসেরনগর রেল স্টেশনের দুরত্ব মাত্র ০৭ কি.মি।

এই দূরত্বের রেলপথের মধ্যেই প্রায় ১০ হাজারেরও অধিক ক্লিপ, হুক গায়েব হয়ে গেছে। ব্রিটিশ আমলের তৈরি সেকশনের রেলসেতু ও কালভার্টসমূহের উপর জীর্নশীর্ণ কাঠের স্লিপারের সাথে পেরেক দিয়ে জোড়াতালি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে ট্রেন চলাচলের সময় যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে রেলপথের শমশেরনগর ও ভানুগাছ স্টেশন সংলগ্ন গোপালনগর রেলগেটের এলাকার কয়েকটি স্থান ঘুরে এচিত্র পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে রেলপথের পাথর ছিটকে যাচ্ছে। রেলপথে স্লিপারসমূহে নাট-বল্টু দিয়ে রেল লাইন আটকানো থাকার কথা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ক্লিপ, নাট-বল্টু নেই। রেলপথ থেকে এসব যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। ভানুগাছ, শমশেরনগর, টিলাগাঁও স্টেশনের মাঝখানে অসংখ্য স্থানে ক্লিপ-হুক নেই। বিশেষ করে ভানুগাছ স্টেশন সংলগ্ন গোপালনগর রেলগেটের মাত্র পাঁচশ’ মিটার এর মধ্যে রেলপাতের সাথে ৪১২টিতেই ক্লিপ পাওয়া যায়নি।

গোপালনগর ও ফাজিলপুর এলকার ৩০২/৭ নম্বর পিলার পর্যন্ত দু’ধারে প্রায় ৪১৬টি ক্লিপ নেই। এমনকি দু’টি লাইনের সংযুক্ত স্থানেও ক্লিপ গায়েব হয়ে গেছে। এলাকার রেলপথে স্লিপার সমূহে নাট-বল্টু দিয়ে রেল লাইন আটকানো থাকার কথা থাকলেও বিভিন্ন স্থানে ক্লিপ, নাট-বল্টু নেই। রেলপথ থেকে এসব যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ায় অনেকটা ফাঁকা হয়ে পড়ছে। দিনের পর দিন ক্লিপ-হুক, নাটবল্টু, ফিশপ্লেট চুরি হওয়ায় সেকশনটি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ট্রেন চলাচলেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। চুরি যাওয়া ওসব যন্ত্রাংশ দ্রুত লাগানোর নিয়ম থাকলেও বছরের পর বছর তা লাগানো হচ্ছে না।

এদিকে ৭ মে রাতে সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের শমশেরনগর রেল স্টেশনের অদূরে দক্ষিণ পাশে ৩০৬/২ নম্বর রেলপথ বাঁক এলাকায় রেলপথের পাতে ফাটল দিয়ে বারো ইঞ্চি ফাঁক তৈরি হয়। এতে ট্রেনের বড় ধরণের দুর্ঘটনার ক্ষেত্র তৈরি হয়। এ সময়ে এক স্কুল শিক্ষার্থীর সচেতনতায় বড় ধরণের দুর্ঘটনা থেকে যাত্রীবাহী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন রক্ষা পায়।

কমলগঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুস শহীদ, সমাজকর্মী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অতীতে ট্রলিযোগে প্রকৌশলী বিভাগের লোকজন নিয়মিত রেলপথ রক্ষণাব্বেণ কাজের জন্য রেলপথে ঘুরে বেড়াতেন। তাছাড়া শ্রমিকদেরও রেলপথ, কালভার্ট, ব্রিজে কাজ করতে দেখা যেতো। প্রতিনিয়ত সংস্কার কার্যক্রম পরিলক্ষিত হলেও বর্তমানে এচিত্র চোখে পড়ে না। এখন রেল সেকশনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূর্র্নীতি গ্রাস করেছে। তারা আরও বলেন, স্টেশন সমুহে টিকিট বিক্রিসহ নানা বাণিজ্য নিয়ে মাস্টারসহ অন্যান্যরা ব্যস্ত থাকেন। ফলে ট্রেন, রেলপথ ও কালভার্ট-ব্রিজে কোন সমস্যা আছে কি না সেটি তাদের কাছে মুখ্য নয়। মানুষের জীবনের চেয়ে টাকা কামানোটাই মুখ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের প্রকৌশলী বিভাগের কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে কুলাউড়াস্থ রেলওয়ের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী মনিরুল ইসলাম বলেন, ভানুগাছ স্টেশনের আউটারে একটি বেইলী ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। কাজ চলছে দশ, বারো দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তাছাড়া হুক, ক্লিপ না থাকা স্থান সমুহে ও কাজ করা হচ্ছে। তবে রেলপথ এখন স্বাভাবিক ও সমস্যাযুক্ত স্থানে কাজ চলছে বলে তিনি দাবি করেন।