মিন্নির জামিন আবেদন গ্রহণ, ৩০ জুলাই শুনানি

নন্দিত ডেস্ক:বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন গ্রহণ করে আগামী ৩০ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। মিন্নির আইনজীবী মঙ্গলবার সকালে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করলে এ আদেশ দেওয়া হয়। এরআগে রোববার বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন। মিন্নির আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে ফৌজদারি মিসকেস এর মাধ্যমে মিন্নির পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিনে শুনানি শেষে আবেদনটি মিসকেস হিসেবে নথিভূক্ত করে নিম্ন আদালতের নথি তলব করেছেন বিচারক। তার দাবি আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জামিন পাবেন। মাহবুবুল বারী আসলাম আরও জানান, মিন্নির সাথে পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত দেখা করতে পারছেন না। তাই বুধবার তিনি কারাগারে মিন্নির সঙ্গে দেখা করে মামলা সংক্রান্ত আইনগত আলোচনা করবেন। অন্যদিকে মিন্নির দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহার ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সোমবার বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেছিলেন আইনজীবীরা। আদালত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনটি জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং চিকিৎসা প্রয়োজন হলে সেটিও জেল কর্তৃপক্ষ দেখবে বলে আদেশ দেন। মিন্নির আইনজীবী আসলাম বলেন, মিন্নির চিকিৎসা সংক্রান্ত আদালতের আদেশ ইতোমধ্যেই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে গেছে। আর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য মিন্নির স্বাক্ষরযুক্ত আবেদন বুধবার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। মঙ্গলবার আদালত চত্বরে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর জানান, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন বাতিল করায়, জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পুনরায় জামিন আবেদন করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, মামলার যা প্রমাণপত্র তাতে আদালত ন্যায় বিচার করলে অবশ্যই মিন্নি জামিন পাবে। মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের অভিযোগ, তিনি আইনজীবীর মাধ্যমেও মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সই মোহর পাননি। অথচ জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, সাংবাদিকরা কোথায় পেয়েছে মিন্নির জবানবন্দি? এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় মামলাটি প্রভাবিত করা হচ্ছে। তিনি আবারও দাবি জানান, কোনো কুচক্রি মহলের প্রভাবে যেন আসল খুনিরা রক্ষা পেয়ে না যায়। পাশাপাশি নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী, রিসান ফরাজীর মতো মাদক সম্রাট এবং সন্ত্রাসী যারা তৈরি করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এদিকে রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের সময় রিফাত ফরাজী ও ভাই রিসান ফরাজীর ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর একটি কারণ হিসেবে আলোচনায় এসেছে, ঘটনার মাস খানেক আগে শহরের রাসেল স্কয়ার এলাকায় রিফাত শরীফের সঙ্গে বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী ও রিফাত-রিসানের খালা সামসুন্নাহার খুকির কথা কাটাকাটি হয়। ওই সময় রিফাত শরীফ সামসুন্নাহার খুকিকে অপমানজনক কথাও বলেছেন। পরে রিফাত ফরাজী ও রিসান ফরাজীর কাছে এ ঘটনা জানিয়ে নালিস করেন খালা খুকি। এর জেরে কিলিং মিশনের অগ্রভাগে রিফাত-রিসান দুই ভাই ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন। মঙ্গলবার দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর সঙ্গে রিফাত ফরাজী ও রিসান ফরাজীর বাক-বিতণ্ডার যে বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে তা সঠিক নয়। তার দাবি, স্ত্রী সামসুন্নাহার খুকির সঙ্গে রিফাত ও রিসানের এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং তাদের সঙ্গে খুকির কোনো পরিচয়ও নেই। একটি মহল রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এ ধরনের মিথ্যা ঘটনার সৃষ্টি করছেন বলে দাবি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের। পাশাপাশি তিনি রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।