সুন্দরবন বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান

সুন্দরবন বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, সুন্দরবনের প্রতি কেউ যেন অযত্ন-অবহেলা করতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট মহলকে উদ্যোগ নিতে বলবো। সুন্দরবনের যেন আরও যত্ন নেওয়া হয়, নতুন নতুন গাছ লাগিয়ে বনকে শক্তিশালী করা হয়। আজ সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে তিনি আরো বলেন, বুলবুলের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল গড়ে ৪০-৯০ কিলোমিটার। আজ বিকাল নাগাদ আবহাওয়ার উন্নতি হতে শুরু করবে। কাল রৌদ্রজ্জ্বল দিন পাবো বলে আশা করছি। ঘূর্ণিঝড়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভীতি ছিল, তা সাংবাদিকরা দূর করতে পেরেছেন। মানুষকে সচেতন করতে পেরেছেন। তাই আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। তাদের তৎপরতার কারণে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এনামুর রহমান বলেন, এ বছর ২১ লাখ ৬ হাজার ৯১৮ জন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। বুলবুল মোকাবিলায় দেশের ১৪টি জেলায় আগেই পাঁচ লাখ করে টাকা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার পাঠনো হয়। নেভি ও কোস্টগার্ড ভালো কাজ করেছে। পটুয়াখালীতে হারিয়ে যাওয়া ১শ’ জেলেকে উদ্ধার করেছে তারা। আগে থেকেই রাসমেলা বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন, ডিসিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। এ কারণে আমরা উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সহস পেয়েছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এ পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ৩০ জন আহত হয়েছেন। পাঁচ থেকে ছয় হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। যে দু’জন মারা গেছেন, তাদের একজনের নাম প্রমিলা মন্ডল (৬৩), বাড়ি খুলনার দাকোপ উপজেলায়। তিনি অনুমতি না নিয়ে সাইক্লোন শেল্টার ছেড়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়ে পথে গাছচাপায় মারা যান। আরেকজনের নাম হামিদ কাজি (৬৫), বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের মাধবখালী ইউনিয়নে। ঘর চাপা পড়ে তিনি মারা গেছেন। তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে এক শিশুর জন্ম হয়েছে। বাগেরহাটের মিঠাখালীর একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বাচ্চাটির জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয়েছে বুলবুলি। নিয়ম অনুযায়ী পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরুর আগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আগে পরিদর্শন করতে হয়। কাল থেকে আমরা পরিদর্শনে যাবো। জেলা প্রশাসক ও থানা নির্বাহী অফিসাররাও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করছেন। এ কাজের জন্য সাত দিন সময় লাগবে। এবার ঝড়ে আমনের ক্ষতি হয়নি। কারণ পটুয়াখালী ছাড়া আক্রান্তদ জেলাগুলোতে আমন চাষ হয় না। পটুয়াখালীতে অল্পকিছু জমিতে আমনের চাষ হয়, সেখানে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে শীতকালীন সবজির কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় এ ক্ষতি পুষিয়ে দিতে কাজ করবে। ‘প্রাথমিকভবে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে— সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। খুলনায় গাছপালা ভেঙেছে বেশি। ভোলায় ৫-৬টি বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝালকাঠিতে ধানের জমির ক্ষতি হয়েছে। বরিশালে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বরগুনায় একটি স্কুলের চাল ভেঙে পড়েছে। পটুয়াখালীতে ৮৫টি কাঁচাঘর ভেঙে পড়েছে। পিরোজপুর ও কক্সবাজারে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তিনি আরো বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ আসতে না চাইলে, জোর করে আনার বিধান রয়েছে। আমরা এবার বলপ্রয়োগ করে কিছু মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে এনেছি। আগে নিরাপত্তার অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাইতো না। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্দামান সাগর থেকে বুলবুলের উৎপত্তি। এটি খুলনা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছিল। রোববার ভোর ৫টার দিকে ঝড়টি খুলনা, বরগুনা ও বাগেরহাটে আঘাত হানে। এরপর ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। সকাল সাড়ে ৯টায় ১০ নম্বর সংকেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত রাখতে বলা হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলামসহ আরো অনেকে।