করোনাকালীন রমজান যে সব সুযোগ নিয়ে এসেছে

রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনে আত্মনিয়োগ করে। রমজানজুড়েই বিরাজ করে পরিবার নিয়ে ইফতার ও সেহরিতে একত্রিত হওয়ার এক উৎসবমুখর পরিবেশ। কাউকে সঙ্গে না নিয়ে একাকী সেহরি কিংবা ইফতার করা যেন কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু করোনা-উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউন, কোয়ারেন্টিন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবার মুসলমানরা কি যথাযথভাবে রমজান মাসের সব ইবাদাত ও আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে পারবে? তবে লকডাউনে সৃষ্ট অচলাবস্থা তাদের জন্য একপ্রকার শাপে বর হয়েছে, যারা কর্ম-ব্যস্ততার জন্য পবিত্র রমজান মাসেও পরিবারকে সময় দিতে পারেন না। এই রমজানটি তাদের জন্য পারিবারিক মেলবন্ধনের একটি অপ্রত্যাশিত সুযোগ। বাস্তবতাকে গ্রহণ করুন সারা দিন করোনা-করোনা করে বিলাপ করলেও করোনা বিদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর ভয়াবহতা নিয়ে সর্বদা আতঙ্কিত ও শঙ্কিত থাকলে, করোনাতে না হলেও দুঃশ্চিন্তা ও আতঙ্কে শরীরের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা ও সতর্কতামূলক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া আমাদের পক্ষে আপাতত আর কিছুই করার নেই। যদিও করোনার কারণে এবার রমজানে মুসলিমরা জামাতে তারাবি, ইফতার মাহফিল ও সেহরি অনুষ্ঠান করতে পারছে না; তবুও ঠাণ্ডা মাথায় চলমান পরিস্থিতি মেনে নিয়ে যদ্দূর সম্ভব স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। রমজানের আনুষ্ঠানিকতাগুলো ডিজিটালাইজড করুন বর্তমান পরিস্থিতিতে যদিও ঘর থেকে বের হওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ, তথাপি ইন্টারনেটের যুগে এখন অনেক কিছুই অনলাইনে করা সম্ভব। ঘরে বসেই অনলাইনে ফুড অর্ডার করা যায়। করা যায় অনলাইন শপিং। এবারের রমজানেও অনলাইন সুবিধাটি কাজে লাগানো যেতে পারে। ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার সওয়াব অর্জন করা যাবে সহজেই। ঘরে বসে ইফতার ও সেহরিতে মজার মজার রেসিপি তৈরি করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। এভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এবারের রমজানকে করে তুলতে পারেন আরও আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ। অনলাইনে কিছু দাওয়াতি কাজ করুন ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করে আমরা অনেক কিছুই জানি ও শিখি। কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারণে এ সব জ্ঞান অন্যদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ হয়ে ওঠে না। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা আমার কাছ থেকে একটি আয়াত হলেও অন্যের কাছে পৌঁছে দাও। সুতরাং ইন্টারনেট ব্যবহার করে সাধ্যমতো দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যান। এভাবে সহজেই এ হাদিসের উপর আমল করা সম্ভব। আর সওয়াবের ব্যাপারটা তো থাকছেই। ঘরেই নামাজের জামাত করুন যদিও এবার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও সালাতুত তারাবি মসজিদে গিয়ে আদায় করার সুযোগ হচ্ছে না, তবুও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাতে সালাত আদায় করে সহজেই জামাতবদ্ধ সালাতের সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। পারিবারিক এই জামাতে ঘরের মহিলারাও অংশগ্রহণ করতে পারেন। ফলে ঘরের মধ্যেই সৃষ্টি হয়ে যাবে মসজিদের জান্নাতি পরিবেশ। শুধু ঘরে থাকলেই পাচ্ছেন সওয়াব রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যদি তোমরা কোনো এলাকায় মহামারীর খবর শোনো, তাহলে তোমরা ঐ এলাকায় প্রবেশ করো না; আর তোমার এলাকায় যদি মহামারী ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে তোমার এলাকা থেকে বেরও হয়ো না। এখনও পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল ঘরে থাকা। যেহেতু ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে, তাই এ হাদীস অনুযায়ী এখন আমাদের কর্তব্য হল ঘরে অবস্থান করা। আর হাদিসের উপর আমলের নিয়তে যদি ঘরে থাকা হয়, তাহলে শুধু ঘরে থাকার কারণেই মিলবে অফুরন্ত সওয়াব। সংযমী হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করুন করোনার কারণে সর্বদা ঘরে অবস্থান করার আরেকটি ইতিবাচক দিক হল এর মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় অর্থব্যয় থেকে বাঁচা যাবে। ইসলামে অপচয় করাকে হারাম করা হয়েছে। সমাজের সব শ্রেণির লোকদের মধ্যেই ইফতারিতে কম-বেশি অপচয় করার একটি প্রবণতা কাজ করে। শুধু সৌখিনতার বশবর্তী হয়ে বাইরের ইফতার বাজারগুলোতে বিক্রি হওয়া অনেক অপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী আমরা ক্রয় করি। কিন্তু এবারের রমজানে বাইরে বের হওয়ার সুযোগ না থাকায় এ ধরনের অপচয় থেকে বাঁচা সহজ হবে। সর্বোপরি বাইরের ব্যস্ততা না থাকায় এবারের রমজানটি আমাদের জন্য বেশি বেশি আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতে মশগুল হওয়ার এক অপূর্ব সুযোগ; বিগত মাসগুলোতে নিজেদের কৃত অপরাধের দিকে ফিরে তাকাবার একটি অপ্রত্যাশিত ফুরসৎ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করে বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্বকে আরও জোরদার করার একটি সম্ভাবনা। তুরস্কের ডেইলি সাবাহ থেকে অনূদিত