সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপনের যত লাভ

সন্তানের শ্রদ্ধাবোধ হারানোর ভয়ে অনেক পিতামাতাই তাদের সন্তানদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চান না। অনেক ক্ষেত্রেই তারা মনে করেন, সন্তানরা তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ গ্রহণ করবে। পিতামাতার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে বাজেভাবে ব্যবহার করার আশঙ্কায় অনেকেই নিজেদের ও সন্তানের মধ্যে দূরত্বের দেয়াল সৃষ্টি করে রাখে। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দূরত্ব সন্তানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক পরিবারে সন্তান বকুনি খাওয়ার আশঙ্কায় কিংবা তিরষ্কৃত হওয়ার ভয়ে তাদের পিতামাতার কাছে পর্যন্ত ঘেঁষে না। বর্তমান সমাজব্যবস্থার মৌলিক সমস্যাগুলোর মূলে রয়েছে দারিদ্র্য, মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা। তবে ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু করে পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্ব পর্যন্ত সব সমস্যার প্রধান কারণ হলো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের অনুপস্থিতি। কিন্তু এ বিষয়টি অনেক পিতামাতাই উপেক্ষা করে যান। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো– পারস্পরিক বন্ধুত্ব স্থাপন। আশপাশের যেসব পরিবারে সহনশীলতার অভাব রয়েছে, সেসব পরিবারের দিকে তাকালে দেখা যাবে– ওই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। পিতামাতা ও সন্তানের মধ্যকার সম্পর্ক শাসনসর্বস্ব হওয়া উচিত নয়, যেখানে পিতামাতা কেবল তাদের সন্তানদের শাসন করে যান। সন্তানকে লেটেস্ট মডেলের মোবাইল ফোন কিনে দেয়া কিংবা দামি দামি উপহারসামগ্রী দেয়ার মধ্যেও পিতামাতার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং মাঝে মাঝে সন্তানের সঙ্গে বসে তাদের সার্বিক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করাও পিতামাতার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। নিজেদের সন্তানের কাছে ‘দৈত্য’ বানিয়ে রাখলে তাদের মনের কথা কস্মিনকালেও জানা সম্ভব নয়। অনেক সময় সন্তান একাকিত্বে ভুগলেও তারা পিতামাতাকে তা বুঝতে দেয় না। সন্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ না হওয়ার ফলে তার জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার পিতামাতার অজানা থেকে যায়। অথচ কৈশোর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সন্তানকে সাপোর্ট করার জন্য পিতামাতার বন্ধুত্বপূর্ণ সঙ্গ অতীব জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, হতে পারে কোনো সন্তান স্কুলে তার বন্ধুদের কাছে অপমানিত হয়েছে। কিন্তু পিতামাতার সঙ্গে সম্পর্কের দূরত্বের কারণে সে তার অনুভূতিটা তাদের কাছে শেয়ার করতে পারছে না। ফলে তার ভেতরকার এই বিরূপ অনুভূতি ধীরে ধীরে ক্ষোভে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে যদি পিতামাতা তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেন, তা হলে সে তার পিতামাতার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করতে পারত। ফলে এ বিরাগভাব তার মনে ক্ষোভের সঞ্চার করতে পারত না। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখলে একদিকে যেমন ভালো পিতামাতা হওয়া যায়, অন্যদিকে সন্তানের সংকটময় মুহুর্তে তার পাশে দাঁড়ানো যায়। এতে করে সন্তানের বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে কমে যায়। সুতরাং সন্তানের অভ্যন্তরীণ সব খবরাখবর জানতে পিতামাতার পক্ষে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই।