বর্জন করলেও ভোটে থাকবে বিএনপি

আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ভোটের মাঠে থাকবে বিএনপি। দলীয়ভাবে এ নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রভাবে দলীয় নেতারা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সেক্ষেত্রে কাউকে দল থেকে শোকজ কিংবা বহিষ্কার করা হবে না। কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্ত জানার পর বিএনপির সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামগঞ্জে চালাচ্চেন প্রচার। এদিকে শেষ ধাপের ১১টি পৌরসভা নির্বাচনেও দলীয়ভাবে অংশ না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। শিগগিরই এসব পৌর ভোট বর্জনের ঘোষণা দিতে পারে দলটি। তবে সংসদ উপনির্বাচন বর্জনের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রথম ধাপে দেশজুড়ে ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদে ১১ এপ্রিল ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইউনিয়নে নির্বাচনী ডামাডোল শুরু হচ্ছে। বুধবার নির্বাচন কমিশন সভায় অনুমোদনের পর ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণা করেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৮ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়  বলেন, এ সরকার এবং নির্বাচন কমিশন দেশের ভোটিং সিস্টেমটাই ভেঙে ফেলেছে। তাদের অধীনে এ দেশে আর অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আসন্ন ইউপি নির্বাচন আমরা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ নির্বাচনে কাউকে অংশ নিতে আমরা যেমন জোর করব না, তেমনি কেউ স্বতন্ত্রভাবে ভোট করতে চাইলে বাধাও দেব না। তিনি বলেন, বিএনপি শুরু থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় প্রতীকে ভোট করার বিপক্ষে। আমরা নির্বাচন কমিশনে লিখিত যে সুপারিশ দিয়েছি সেখানেও এ বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। কারণ ইউপি নির্বাচনের ভোটে এলাকায় সব সময় একটা উৎসবের আমেজ দেখা যেত। এসব ভোটে এলাকায় আত্মীয়স্বজন, পারিবারিক ঐতিহ্য ও প্রভাব বিশেষ ভূমিকা রাখত। যারাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তারা সবার জন্য কাজ করেছে। কিন্তু ইউপিতে দলীয় প্রতীক দেওয়ায় সেই ঐহিত্য নষ্ট হয়ে গেছে। নিকট-আত্মীয় কেউ নির্বাচন করলেও রাজনীতির কারণে তার বিরোধিতা করতে হচ্ছে। এতে করে দীর্ঘদিনের আত্মীয়তার বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা ইউপি নির্বাচন দলীয়ভাবে বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শুধু তৃণমূলের ঐতিহ্যের জন্যই নয়, আরও বেশ কয়েকটি কারণেও ইউপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙা করতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর তা অনেকাংশে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ভোটের মাঠে নেতাকর্মীরা নতুন করে মামলা-হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে হয়েছেন এলাকাছাড়া। তাছাড়া অতীতের ভোট পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যেন ধানের শীষের প্রতিপক্ষ। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে মিলে ধানের শীষের পরাজয় নিশ্চিত করাই যেন তাদের মূল এজেন্ডা। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকই দেওয়া হবে না। যাতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ধানের শীষ ফোবিয়া কিছুটা কমে। কেউ যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করতে চায় তাতে দলীয়ভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না। ধানের শীষ প্রতীক না থাকলে সরকার ও ইসি কিছুটা হলেও নমনীয় হবে। নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা ও নির্যাতন থাকবে না। সেক্ষেত্রে দলীয় কোনো নেতা স্থানীয় ও জনপ্রিয়তার কারণে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হতে পারে। স্বতন্ত্রভাবে চেয়ারম্যান হলেও ওই নেতা বিএনপির পক্ষেই কাজ করবে বলে আশা করি। জানতে চাইলে গত নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়া শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীরচর ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাও করা যায় না। দলীয়ভাবে নির্বাচন করায় নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে হামলা-মামলা ও নির্যাতন। তাই দলীয় প্রতীকে ভোট বর্জনের ঘোষণাকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। তবে দলীয়ভাবে নির্বাচন বর্জন করলেও আমি স্বতন্ত্রভাবে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ এলাকায় আমার পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। আত্মীয়স্বজন আছে অসংখ্য। নিজের জনপ্রিয়তা ও সাধারণ ভোটারদের ভালোবাসা পেলে স্বতন্ত্রভাবে ভোট করেও জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তবে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শেষ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয় আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ নেতা নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দেন। এক নেতা বলেন, পৌর ও ইউপি দুটোই স্থানীয় সরকার নির্বাচন। ইতোমধ্যে আমরা ইউপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। এরপর যদি বাকি পৌর নির্বাচনে যাই তাহলে তা দ্বৈতনীতি বলে অনেকে মনে করবে। তাই উচিত হবে বাকি পৌর ভোটও বর্জন করা। তার এ যুক্তির পক্ষে কয়েক নেতা একমত পোষণ করেন। আগামী ১১ এপ্রিল শেষ ধাপের ১১ পৌরসভার ভোট হবে। ১৮ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। কিন্তু বিএনপি এখন পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেনি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জাতীয় সংসদের লক্ষ্মীপুর-২ উপনির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।