তালাক দেওয়ার কসম করলে তালাক হয়ে যাবে?

প্রশ্ন: কেউ যদি স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় কসম খায়, সে ক্ষেত্রে কী করণীয়? যেমন— স্বামী বললেন, ‘আল্লাহর কসম তুমি ওই কাজ করলে আমি তোমাকে তালাক দেব।’ এ ক্ষেত্রে কি তালাক দিতেই হবে? বা ওই কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে কি স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে?

উত্তর: কোনো ব্যক্তি কসম খেয়ে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার হুমকি দিলে/প্রতিজ্ঞা করলেই (ওই কাজ করা মাত্র) স্ত্রী তালাক হয়ে যায় না। বরং স্বামী যদি প্রতিজ্ঞা পূরণের জন্য তখন লিখিত বা মৌখিকভাবে সরাসরি তালাক দেন, শুধু তা হলেই তালাক হবে।

তবে স্বামী যদি বলেন, ‘অমুক কাজটি করলেই তুমি বায়েন তালাক/তিন তালাক/তালাক হয়ে যাবা/আমাদের বিবাহ ছিন্ন হয়ে যাবে/তুমি ডিভোর্স হয়ে যাবা/তোমার ওপরে তালাক পতিত হবে/।’ তা হলে ওই কাজটি করা মাত্রই স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে।

কারণ এ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি, বরং তালাক পতিত হওয়ার বিষয়টিকে কোনো একটা কাজ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে শর্তযুক্ত করা হয়েছে। তাই কাজটি সংঘটিত হলে সঙ্গে সঙ্গেই তালাক পতিত হয়ে যাবে। উইথড্র করার কোনো রকম সুযোগ নেই। (তাবয়িনুল হাকাইক- ৩/১০৯, ফতওয়ায়ে আলমগিরি-১/৪২০, হিদায়া-২/৩৮৫)

মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যদি আমি কোনো বিষয়ে শপথ করি। অতঃপর আরেকটি বিষয় তার চেয়ে উত্তম পাই, তা হলে উত্তম কাজটি করে শপথ ভেঙে ফেলি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭১৮)

তাই কসমকারী ব্যক্তি যদি স্ত্রীকে তালাক না দিয়ে সংসার বহাল রাখা কল্যাণকর মনে করেন, তা হলে তার শপথ ভেঙে (অর্থাৎ তালাক না দিয়ে) কাফফারা দিতে হবে এবং তাওবা ইস্তিগফার করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৩/১৭)

বর্তমানে মুসলমানদের জন্য কসমের কাফফারা আদায়ের দুটি পদ্ধতি রয়েছে:

এক. ১০ মিসকিনকে (নিতান্ত দরিদ্র) দুই বেলা পেট ভরে সাধারণত নিজে যে মানের খাবার খায় সেই মানের খাবার খাওয়ানো বা এর মূল্য দিয়ে দেওয়া। একেকজনকে সর্বনিম্ন ফিতরা সমপরিমাণ অর্থ দিলেও আদায় হয়ে যাবে।

দুই. ১০ মিসকিনকে ১০ সেট মধ্যম মানের পোশাক প্রদান করা। এ দুটির যে কোনোটি বেছে নেওয়ার সুযোগ আছে। সত্যিকারের অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এর কোনোটিতেই সক্ষম না হলে নিতান্ত গরিব লোকজন ধারাবাহিক তিনটি রোজা রেখেও কাফফারা আদায় করতে পারে। (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮৯, দুররুল মুখতার : ৩/৭২৫)