এসডিজির শর্ত-১৬ মেনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায় জাতিসংঘ

নন্দিত ডেস্ক: ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৬ নম্বর শর্ত অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে। আজকে আমরা নিকট অতীত থেকে অনেক ভালো আছি। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত সংলাপ নির্বাচন নিয়ে অনেক টেনশন দূর করে দিয়েছে। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তখনই সম্ভব হয় যখন ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে।’ বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো সারাবাংলা’র সঙ্গে একান্ত আলাপকালে এই কথা বলেন। মিয়া সেপ্পোর সঙ্গে তার আগারগাঁওয়ের কার্যালয়ে গত ২৫ নভেম্বর (রোববার) দুপুরে এই প্রতিবেদকের আলাপ হয়। আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘এসডিজির ১৬ নম্বর শর্তটি (শান্তিপূর্ণ নির্বাচন) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের উন্নয়ন নীতির ক্ষেত্রে ১৬ নম্বর শর্তটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে তা আমরা খুব মনযোগের সঙ্গে লক্ষ্য রাখছি। ১৬ নম্বর শর্তটি শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক সমাজ গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এসডিজির এই বিষয়টি পুরোটাই শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। কেন না নির্বাচন অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণ হলেই অহিংসমূলক সমাজ গঠন করা সম্ভব। বাংলাদেশ এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। নির্বাচনকে ঘিরে সবগুলো দলের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান। সবগুলো দলই নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে আজকে আমরা নিকট অতীতের সময় থেকে অনেক ভালো আছি। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত সংলাপ অনেক টেনশন দূর করে দিয়েছে। ভোটের আগে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত সংলাপ খুবই ইতিবাচক। এই সংলাপকে স্বাগত জানাই। এর মধ্য দিয়ে কিছু ভালো ফলও পাওয়া গেছে।’ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশ্রগহণমূলক নির্বাচনের কথা বলতে গিয়ে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘নির্বাচন সবসময়েই অংশগ্রহণমূলক হতে হয়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অঙ্গীকার জরুরি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সঙ্গে সকলের স্বার্থ জড়িত। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন তখনই সম্ভব হয় যখন ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের নেতা নির্বাচন করতে পারে। বড় বিষয় হচ্ছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন একটি দেশের উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করে। উন্নয়ন এজেন্ডাগুলো যাতে নির্বিঘ্নে এগিয়ে নেওয়া যায় সে জন্যও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। এ জন্যই আমরা নিরেপক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে গুরত্ব দেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়েই কাজ করি। এবং নিশ্চিত হতে চাই যে কোনো সময় যেন নষ্ট না হয়। কেননা নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বা নির্বাচনের পরের পরিস্থিতি ইতিবাচক না হলে একটি রাষ্ট্র সামনের দিকে এগুতে পারে না। ভবিষ্যতের জন্য অর্থনৈতিক বা উন্নয়নের লক্ষ্য ঠিক করতে পারে না।’ আগামী সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে। বাংলাদেশ এখনো গণতন্ত্র উন্নয়নের পথে রয়েছে। আমি মনে করি, আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার সুযোগ রয়েছে। কেন না নির্বাচনে সকলের মত প্রতিফলিত হয়। এই মত প্রতিফলিত হবে নির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে, যার কেন্দ্রে অবস্থান করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন ভোটাধিকারের রক্ষক হিসেবে কাজ করে, আবার নাগরিকদের আস্থাস্থল হিসেবে কাজ করে।’ মিয়া সেপ্পো আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এবং শক্তিশালী গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়তে এই নির্বাচনে পরিষ্কার সুযোগ রয়েছে। এই দিক থেকে আশা করব নির্বাচনে যতোটা সম্ভব সহিংসতা কম হবে, যেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন মানেই সহিংসতার চিত্র ফুটে ওঠে।’