অবিবাহিত অন্তঃসত্ত্বা বিদেশিকে আশ্রয় দিল তালেবান

তালেবান যখন গত বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের দখল নেয়, নারী অধিকার প্রশ্নে তখন থেকেই প্রশ্নের মুখে তারা। আফগান নারীদের নিরাপত্তা ইস্যুতে তালেবানকে প্রশ্নে জর্জরিত করাদের একজন নিউজিল্যান্ডের সাংবাদিক চার্লট বেলিস। করোনার স্বাস্থ্যবিধির কারণে নিজ দেশ নিউজিল্যান্ডে ঢুকতে না পারা বেলিসকে আশ্রয় দিয়েছে আফগানিস্তানের তালেবান শাসকরা। তিনি অন্তঃসত্ত্বা। আগামী মে মাসে তার সন্তান জন্ম দেয়ার কথা রয়েছে।

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের এক কলামে এই নারী সাংবাদিক লিখেছেন, তার দেশ তাকে ফিরতে দেয়নি। পরে তিনি তালেবানের সাহায্যপ্রার্থী হন। বর্তমান তিনি আফগানিস্তানে আছেন। মতামতধর্মী কলামে নারী সাংবাদিক চার্লট বেলিস লেখেন, এটা নির্মম পরিহাস। একসময় নারীর প্রতি তালেবানের আরচণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। এখন সেই প্রশ্ন নিজ দেশের সরকারকে করতে হচ্ছে।

আল জাজিরার হয়ে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের খবর সংগ্রহের সময় আলোচনায় আসেন চার্লট বেলিস। হেরাল্ডের কলামে এই নারী সাংবাদিক লেখেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে কাতারে ফিরে আসেন তিনি। সেখানে আমেরিকান ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার জিম হোলেব্রুয়েকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে অন্তঃসত্ত্বা হন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়াকে অবশ্য অলৌকিক বলেছেন বেলিস। কারণ চিকিৎসকরা তাকে জানিয়েছিলেন, কোনো দিন মা হতে পারবেন না তিনি।

মা হওয়ার খবরটিতে উচ্ছ্বসিত হওয়ার পাশাপাশি এ সময় তাকে ঘিরে ধরে আরেক আতঙ্ক। মুসলিমপ্রধান দেশ কাতারে বিয়েবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক অবৈধ। তাই দেরি না করে নিউজিল্যান্ডে ফেরার চেষ্টা করেন দুজনই। নভেম্বরে আল জাজিরার চাকরি ছেড়ে দেন বেলিস। এরপর প্রেমিক জিমকে নিয়ে যান বেলজিয়ামে। আবাসিক অনুমতি না থাকায় সেখানেও থিতু হতে পারেননি তারা। এর মাঝে জরুরি ভিত্তিতে ফেরার জন্য নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কাছে ৫৯টি নথি পাঠিয়েছেন। তবে সব আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।

এরপর বেলিসের সামনে আফগানিস্তানে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। তিনি যোগাযোগ করেন তালেবান নেতাদের সঙ্গে। তালেবান জানায়, আফগানিস্তানে তিনি নিরাপদে থাকবেন। তবে সবাইকে বলতে হবে তিনি বিবাহিত। কোনো সমস্যা হলে তাদের জানানোর কথাও বলেন তালেবান নেতারা।

কলামে বেলিস আরও লেখেন, আফগানিস্তানে গর্ভধারণ নিয়ে শঙ্কিত তিনি। স্বাস্থ্যব্যবস্থা বেহাল। এই অবস্থায় তিনি আশা করছেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই নিজ দেশে ফিরতে পারবেন তিনি।

বেলিসের কলাম প্রকাশের পর নিউজিল্যান্ডের কোভিড রেসপন্স মন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স হেরাল্ডকে বলেন, ‘সাংবাদিক বেলিসের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। করোনার তাণ্ডবে বিশ্ব যেখানে বিপর্যস্ত, সেখানে অনেকটাই নিরাপদে নিউজিল্যান্ড। প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের সঠিক দিকনির্দেশনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর হার এখনও নিয়ন্ত্রণে। বিদেশে থাকা নাগরিকরা নিউজিল্যান্ডে ফিরলে সেনা পরিচালিত হোটেলে ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকার বাধ্যতামূলক নিয়ম করা হয়েছে।