অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল জায়গা ব্যাংক: অর্থমন্ত্রী

নন্দিত ডেস্ক:অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, যে যাই বলুক– দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল জায়গা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক নিয়ে মানুষের মধ্যে যে আস্থা ছিল এখন তা নেই। দেশের দু'চারটা ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হাজার-হাজার কোটি টাকা নিয়ে আর ফেরত দিতে পারছে না। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টেলিফোন করে কাউকে পাওয়া যায় না। এ পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ নিরীক্ষা করে প্রকৃত অবস্থা দেখা হবে। বুধবার জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন গভর্নর ফজলে কবির ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। জনতা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ১৭ হাজার ২২৫ কোটি টাকা ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা ব্যাংক খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক সময় মূলধন উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংকটিতে এখন ৫ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত বছর বিপুল অংকের লোকসানসহ অধিকাংশ সূচকের অবনতি হয়েছে। এ দুরবস্থার জন্য ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও এননটেক্সের ঋণ দায়ী বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও এমডি। তবে এ দুই প্রতিষ্ঠানের নেওয়া ঋণের সবই আগের পরিচালনা পর্ষদের সৃষ্টি বলে জানানো হয়। সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকিং বিষয়ে যারা বোঝেন না তাদের আর পর্ষদে বসতে দেওয়া হবে না। কেননা এটা খেলার জায়গা না। না জেনে বুঝে কেউ ব্যাংক চালাতে পারে না। অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হওয়ার জন্য তার কাছে অনেকেই তদবির করেছেন জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ইতিমধ্যে যা হয়ে গেছে আর হবে না। যে কাউকে আর পরিচালক বানানো হবে না। একজন একজন করে সাক্ষাৎকার নিয়ে, দেখে দেখে ব্যাংকের পর্ষদে পাঠানো হবে। গভর্নরও তার মতো করে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, পরিচালনা পর্ষদ বা কর্মকর্তা– অসাধু কাউকে রেখে এগোনো যাবে না। একটি ব্যাংকের সবাই খারাপ– তা নয়। দু'একজনের কারণে সবাইকে দায় নিতে হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা অসৎ উপায়ে টাকা বের করে নেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে ব্যাংকারের দায়িত্ব তা প্রতিহত করা। প্রতিহত না করে এদের যারা প্রশ্রয় দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাংকারদের দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি দুদকের একজন কমিশনার তার সঙ্গে দেখা করেছেন জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি তাকে (দুদক কমিশনার) আশ্বস্ত করেছেন– অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় সব প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির ক্ষেত্রে 'জিরো টলারেন্স'। মুস্তফা কামাল বলেন, কর্মকর্তা বা ব্যবসায়ীদের জেলে ভরতে বিশেষ অডিট করানো হবে– তেমন নয়। বরং আমানতকারীর সুরক্ষার জন্য এটা করা হবে। ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে যারা খেলাপি হচ্ছেন তাদের থেকে টাকা আদায়ের জন্য নিরীক্ষা চালানো হবে। তবে কেউ অপরাধ করে গোপনে এসে ক্ষমা চাইলে তাকে সুরক্ষা দেওয়া হবে। তবে এ জন্য তিনি যে টাকা নিয়ে গেছেন তা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য সব ব্যবসায়ী খারাপ না। এজন্য পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে ব্যবসা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়া প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধ্য অনুযায়ী সরকার সহায়তা করবে। সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, একটা ঋণ দিলে কোনো না কোনো অনিয়ম হবে, এর চেয়ে ঋণ না দেওয়া ভালো– এরকম চিন্তা করলে হবে না। বরং সব ধরনের নিয়ম মেনে ঋণ বিতরণ করতে হবে। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। মূলধনে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করতে হবে। বড় ঋণ বিতরণের চেয়ে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ বিতরণের ওপর জোর দিতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, মানুষের আস্থার জায়গা এখনও ব্যাংক। চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। আমানতকারীর স্বার্থ রক্ষায় পরিচালনা পর্ষদের সদস্যসহ সবাইকে কাজ করতে হবে। জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহা বলেন, ক্রিসেন্ট ও এননটেক্সের কারণে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক বেড়েছে। এই প্রতিষ্ঠান দু'টির ঋণ দেওয়া হয়েছে অনেক আগে। এখন খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে কর্মকর্তাদের কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। ব্যাংকের এমডি আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, ক্রিসেন্ট ও এননটেক্স গ্রুপের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে জনতা ব্যাংক। এ দুই গ্রুপ থেকে টাকা আদায়ে ব্যাংক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ক্রিসেন্টের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়েছে।