বৈদেশিক ঋণ বাড়ছেই

বিদেশি উৎস থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদেশি উৎস থেকে দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। ৫ বছর পর গত অর্থবছরের মার্চ শেষে এই ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৩ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। এটি দেশের মোট জিডিপি’র প্রায় ২১ শতাংশ। এই ঋণের প্রায় ৭৩ শতাংশই সরকারের নেয়া। বাকি ঋণ নিয়েছে বেসরকারি খাত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত মার্চ শেষে বিদেশি উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৮ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে প্রায় ৫৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয় সরকার সরাসরি। এ ঋণের পুরোটাই দীর্ঘমেয়াদি। বাকি ১১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এই সময়ে বিদেশি উৎস থেকে বেসরকারি খাতের নেয়া ঋণের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। একক প্রকল্পে সরকার সবচেয়ে বড় ঋণ গ্রহণ করছে রাশিয়া থেকে। টাকার হিসাবে দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এ ঋণ নেয়া হচ্ছে। রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি করতে খরচ হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া। বাকি টাকার জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। একইভাবে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ প্রকল্পে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ দিচ্ছে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে বিদেশি উৎস থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাতের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবছরে বিদেশি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। যে সময় বিদেশি ঋণ ছিল দেশের মোট জিডিপি’র ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এরপর থেকে বিদেশি ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে চলছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ। ওই সময়ে দেশে মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। এরপর চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে তা আরও প্রায় ১১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে। সরকারের পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতেও বিদেশি ঋণ বেড়েছে দ্রুতগতিতে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছরে বেসরকারি খাতে বিদেশি এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯৮ কোটি ডলারে।