ডলার নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না

বাজারের চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও সংকট কাটাতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। একাধিক অভিযানে দর কমে আসলেও ডলার নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না। দেশের ব্যাংকগুলোতেও ডলারের সংকট আরও প্রকট হয়েছে। গত বুধবার ৫ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে জুলাই মাসের শুরু থেকে ২৪শে আগস্ট পর্যন্ত ২০৪ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির কারণে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার পরেও রিজার্ভ কমে ৩৯.৩৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগামী মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর আরও কমবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদরা। সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ১১০ টাকা থেকে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আমদানির জন্য করপোরেট সেলের আওতায় অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে ১১১ টাকা থেকে ১১২ টাকায়। এদিকে ব্যাংকে চাহিদা অনুযায়ী ডলকেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বেঁধে দেয়া হলেও ওই দামে কোনো ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে জরুরি প্রয়োজনে ওই দামে ডলার বিক্রি করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ডলার কেনাবেচার যে দর ঘোষণা করছে সেই দরের সঙ্গেও বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ঘোষিত দরের চেয়ে ব্যাংকগুলো অনেক বেশি দামে ডলার কেনাবেচা করছে। ফলে আমদানির জন্য ডলারের দাম ৯৫ টাকা ৫ পয়সার দরটি শুধু কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। ব্যাংকগুলোর কাছে ১১০ টাকার বেশি দর হাঁকছে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। তবে ব্যাংকে ডলারের দাম কমে আসায় খোলাবাজারেও কমেছে ডলারের দাম। বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, মানিগ্রাম ১০৩.৯৫ টাকা, স্মল ওয়ার্ল্ড ১০৯.৪১ টাকা এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ১০৮.৭৩ টাকা দিয়ে প্রবাসীদের কাছে থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য এলসি সেটেলমেন্ট বা নিষ্পত্তি করেছে ১০৫ থেকে ১০৬ টাকা দরে। সূত্র জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে ১১০ টাকা থেকে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। আমদানির জন্য করপোরেট সেলের আওতায় অন্য ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে ১১১ টাকা থেকে ১১২ টাকায়। ওই দামে ডলার কিনে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। পণ্যের দামও বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ডলারের দাম এখন নিম্নমুখী। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বাড়ায় ডলারের বাজার এখন আগের তুলনায় কিছুটা স্থিতিশীল। তবে দুই-তিনদিনের স্থিতিশীলতাকে বাজারের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা বলা যায় না। তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলো লেনদেনের ক্ষেত্রে এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি সতর্ক। একজন কর্মকর্তা বলেন, আমদানি কমেছে।

 মে থেকে এলসি খোলার বিষয়ে ব্যাংকগুলো অনেক কঠোর হয়ে গেছে। অপ্রয়োজনীয় রপ্তানির ক্ষেত্রে তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। ফলে প্রায় ৩ মাসের ব্যবধানে ইমপোর্ট এলসির চাপও এখন কিছুটা কমে এসেছে। ফলে ডলার প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। দাম কমে আসছে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলোর ডলার কেনায় কম্পিটিশনও আগের তুলনায় কমেছে। বেশিরভাগ ব্যাংকই বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনছে না। ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতাও বেড়েছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, রিজার্ভ কমার প্রধান কারণ হচ্ছে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫৯.২১ বিলিয়ন ডলারের মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ওই রপ্তানি মূল্যের বিপরীতে দেশে এসেছে ৩১৪.৩৭ বিলিয়ন ডলার। অবশিষ্ট ৪৪.৮৪ বিলিয়ন ডলারের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না, যা মোট পণ্য রপ্তানি মূল্যের ১২.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ গত ১০ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের ৪৪.৮৪ বিলিয়ন ডলার দেশে আসেনি। ফলে ডলার সংকটের এটাও একটা কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।ার পাওয়া যাচ্ছে না।