গরমের অসুস্থতা থেকে বাঁচার উপায়

আপনার পেটে ও পা দুটোয় আচমকা যেন টান লাগল বা কেউ খামচে ধরল। এ সমস্যার নাম হিট ক্র্যাম্প। শরীরে পানি ও লবণের অভাবে এমনটা ঘটে। এ অবস্থায় দ্রুত গরম ও রোদ থেকে সরে যান। তুলামূলক ঠান্ডা জায়গায় বসে পড়ুন। প্রচুর পানি ও লবণসমৃদ্ধ তরল (যেমন : ডাবের পানি, লেবু-লবণের শরবত) পান করুন। পরিশ্রম থেকে বিরত থাকুন। খুব ধীরে মাংসপেশি নাড়াচাড়া এবং পায়ের হালকা ব্যায়াম করুন। সারা দিন রোদে গরমে ঘুরে দেখলেন সারা শরীরের উন্মুক্ত ত্বক লালচে হয়ে গেছে বা পলাল ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। কখনো চুলকায়। সমস্যার নাম হিট র‌্যাশ। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ত্বকে ঠান্ডা বরফ বা ভেজা কাপড় লাগান। তীব্র গরমে যে কেউ এমন আকস্মিক জটিলতায় পড়তে পারেন, বিশেষত শিশু, বৃদ্ধ, স্থূল ব্যক্তি, কারখানার শ্রমিক বা কৃষক, স্নায়ুরোগীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। সুস্থতার জন্য তারা প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল পান করবেন। ডাবের পানি ও ওরস্যালাইন বেশ কাজে দেয়। হালকা রঙের সুতি জামাকাপড় পরবেন। বাইরে বেরোলে ছাতা, সানগ্লাস বা হ্যাট ব্যবহার করুন। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে আগে শরীরটা বাতাসে জুড়িয়ে নিন, তারপর গোসল করবেন। বেশি রোদে ও গরমে বাইরে ব্যায়াম বা খেলাধুলা করবেন না।


প্রচণ্ড গরমে বাসের মধ্যে বদ্ধ পরিবেশে হাঁসফাঁস করলে নেমে পড়ুন। আমরা প্রতিদিন যে চা পান করি, সেটা ব্ল্যাক টি। কখনো দুধ-চিনি মিশিয়ে, কখনো বা চিনি ছাড়াই চা পান করার প্রচলন রয়েছে। তবে আমাদের দেশে গ্রিন বা সবুজ চা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চা-গাছের সতেজ সবুজ পাতা রোদে শুকিয়ে তাওয়ায় সেঁকে গ্রিন টি প্রস্তুত করা হয়। এর রং হালকা হলদে সবুজ। এ চায়ে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনেয়েড নামের দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা চা তৈরির পরও অক্ষুণ্ন থাকে। 

গ্রিন টি আমাদের শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। এ চা আমাদের শরীরের ওজন ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। চীনের একদল গবেষক দেখিয়েছেন যে, সবুজ চায়ে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থ মানুষের স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায় এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়ের স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণে মস্তিষ্ককে সাহায্য করে। যুক্তরাজ্যে এক গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত গ্রিন টি সেবন করলে দাঁতের ক্ষয়রোগের ঝুঁকি কমে। তবে ওজন কমাতে হলে খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে অথবা ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যালরি ক্ষয় বাড়াতে হবে। শুধু গ্রিন টি পান করে ওজন কমানো সম্ভব নয়।

গ্রীষ্মে পানীয়

গরমে ও রোদে বাইরে বেরোলে, এমনকি ঘরেও পরিশ্রমের কাজ করলে প্রচুর ঘাম হয়। এর ফলে শরীর পানি ও লবণ হারায়। এ মৌসুমে সহজেই পানিশূন্যতা ও লবণশূন্যতা হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ঝুঁকি একটু বেশি। তাই তাদের ক্ষেত্রে বারবার লক্ষ রাখা উচিত, তারা যথেষ্ট পানি বা তরল খাচ্ছেন কি না। এ গরমে বারবার পানি পান করার সঙ্গে পরিবারের সবাই মিলে এমন সব পানীয় গ্রহণ করতে পারেন, যা পানি ও লবণের অভাব পূরণ করে সহজেই; প্রশান্তি এনে দেয় ও শরীরের তাপমাত্রা কমায়।

* লেবু-পানি : লেবুর রস ও সামান্য লবণমিশ্রিত এক গ্লাস পানি এ গরমে কেবল প্রশান্তিই দেবে না, লবণশূন্যতাও পূরণ করবে। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তারা চিনি দিয়ে শরবত করেও খেতে পারেন। লেবুতে আছে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম ও ভিটামিন সি, লবণে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং চিনিতে সহজ শর্করা, যা দ্রুত শক্তি জোগায়। এ ছাড়া লেবুর রস অন্ত্রে লৌহ শোষণে সাহায্য করে, খাবারে রুচি বাড়ায়।

* ডাবের পানি : গরমে এই জনপ্রিয় পানীয় আমরা প্রতিদিনই পান করতে পারি। ডাবের পানিতে আছে বেশ ভালো পরিমাণে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম। ক্যালরিও কম নয়। তাই খুব গরমে পরিশ্রান্ত অবস্থায় এটি দ্রুত চাঙা হতে সাহায্য করে। গরমে ডায়রিয়া হলে ডাবের পানি কার্যকর ভূমিকা পালন করে। শরীর ঠান্ডাও রাখে।

* কাঁচা আমের শরবত : কাঁচা আমের সঙ্গে লবণ-চিনি-পুদিনা পাতা সামান্য কাঁচা মরিচ দিয়ে ব্লেন্ড করে শরবত করে খেতে পারেন। এতে পুষ্টি, ভিটামিন ও খনিজের সঙ্গে পানির অভাবও পূরণ হবে।

* পুদিনা পাতার শরবত : লেবুর রসের সঙ্গে বা শুধু পানির সঙ্গে পুদিনা পাতা ব্লেন্ড করে এ শরবত তৈরি করতে পারেন। অথবা লেবু পানি বা শরবতের মধ্যে কয়েকটা তাজা কাঁচা পুদিনা পাতা ছেড়ে দিয়ে মিশিয়ে দিতে পারেন। এ পানীয় গরমে প্রশান্তি ও আরাম দেবে। এছাড়া পুদিনা পাতায় পটাশিয়াম আছে। এটি বমি ভাব দূর করে দেহ-মন তাজা করে। গরমে পানীয় বেছে নেয়ার সময় যে বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবেন তা হলো, অনেক বরফ মিশিয়ে বা খুব ঠান্ডা পানীয় পান করবেন না। স্বাভাবিক তাপমাত্রার বা ঠান্ডার সঙ্গে স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে পান করুন। এতে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমবে। ডায়াবেটিস ও স্থূল রোগীরা চিনি মেশাবেন না। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা লবণ একটু কম দেবেন। আর কিডনি রোগীদের জন্য অতিরিক্ত পটাশিয়াম ক্ষতিকর হতে পারে।

গ্রীষ্মকালীন ফল

গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে নানা জাতের সুমিষ্ট রসালো ফল পাওয়া যায়। এসব মৌসুমি ফল যেমন উপাদেয়, তেমনি উপকারী।

* আম : এটি ক্যারোটিনসমৃদ্ধ সহজপাচ্য সুমিষ্ট ফল। আমের আকার ও ধরনের ওপর এর ক্যালরির পরিমাণ নির্ভর করে। একটা মাঝারি আকৃতির আমে ৫০ থেকে ১০০ ক্যালরি আছে। পাকা আমে ৬০ শতাংশ বেশি ক্যারোটিন থাকে। কাঁচা আমে আছে পিকটিন। আম কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। এতে আছে প্রতি ১০০ গ্রামে ৪০০ ইউনিট ভিটামিন এ, প্রায় ১৫ গ্রাম শর্করা, ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি।

* জাম : এ ফলে প্রচুর আয়রন আছে। রক্তশূন্যতার রোগীদের তাই জাম খেতে বলা হয়। এতে শর্করা খুব কম। আয়রন ৪.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৬০ গ্রাম।

* কাঁঠাল : এ ফল বেশ রসালো ও সুস্বাদু। তবে এটি সহজপাচ্য নয় ও পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। ক্যারোটিনসমৃদ্ধ এ ফল রুচি ও শক্তিবর্ধক। ১০০ গ্রাম কাঁঠালে ৪০ গ্রাম শর্করা, ২০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ৯৩ ক্যালরি শক্তি আছে।

* লিচু : এ ফলে জলীয় অংশ অনেক। এটা শরীরের পানির চাহিদা ও পিপাসা মেটায়। ১০০ গ্রাম লিচুতে ১৩.৬ গ্রাম শর্করা আছে। ক্যালসিয়াম আছে ১০ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৩১ মিলিগ্রাম।