নতুন স্যাংশন এলে তা হবে দুঃখজনক

ফাইল ছবি

নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে মর্মে যে খবর রটেছে, সে বিষয়ে এখনো সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোমেন বলেন, নতুন নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আগামীতে নিষেধাজ্ঞা হবে কি-না? সে বিষয়েও আমার কোনো ধারণা নেই। ওরা (আমেরিকা) আমাদের বলে-কয়ে কিছু করে না। তবে এটি নির্ভর করে স্ব স্ব সরকারের ওপর। নিষেধাজ্ঞা যদি আসে, তবে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। আমেরিকা হাজার হাজার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি, আমেরিকার শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা এসব (নিষেধাজ্ঞা আরোপ) করবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাতার সফর উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। কাতার ইকোনমিক ফোরামে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকালে দোহার উদ্দেশ্যে ঢাকা

নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অন্যদের জন্য সতর্কবার্ত:

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে একটি জাতীয় দৈনিকের নাম উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেই রিপোর্টে একটি মিথ্যা তথ্য দিয়েএটি আমাদের সরকারের জন্য অপমানজনক। মিথ্যা তথ্যটি হচ্ছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানে আমি, মন্ত্রী হওয়ার আগে চাইনিজ লবিস্ট হিসেবে কাজ করেছি। এটা ডাহা মিথ্যা। কোনোদিন কোনো চাইনিজ কোম্পানিতে কাজ করেননি দাবি করে মন্ত্রী মোমেন বলেন, বরং বলতে পারেন, আমি সারা জীবন আমেরিকায় ছিলাম এবং সেখানে কাজ করেছি। আমি জানি না, তারা কেন এটি করলো। খুব অদ্ভুত! জেনে-শুনে এই মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছে। বাংলাদেশের উপর আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে এবং এটি মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে রোববার খবর প্রকাশ করে দৈনিক কালবেলা। রোববার ওই খবরের অংশ বিশেষের প্রতিবাদ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে নিষেধাজ্ঞার বিষয় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীন কানেকশন বিষয়ে দেয়া একটি তথ্যের প্রতিবাদ জানানো হয়। প্রতিবাদ পাঠানোর কারণ হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, আমি মনে করেছি, এই মিথ্যাটার প্রতিবাদ করা উচিত। আমি কোনো চাইনিজ কোম্পানিতে কাজ করিনি, কারও লবিস্টও ছিলাম না। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ওই প্রতিবেদনের দুর্বলতা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই প্রেক্ষিতে আপনি যে ভুল তথ্য দিলেন, খবর দিলেন এগুলো আমাদের কোনো জানা নাই। সুতরাং এটা খুব অদ্ভুত এবং আশ্চর্যজনক; এবং তারা কোনো রেফারেন্সও উল্লেখ করেনি। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে রোববার দেয়া কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য উদ্ধৃত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, তবে, আমাদের কৃষিমন্ত্রী এরই মধ্যে বলেছেন, নতুন করে স্যাংশন আসার কোনো কারণ নেই। সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক সফর ও বিভিন্ন ফোরামে তাদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী মোমেন বলেন, তাদের বক্তব্য অত্যন্ত পজিটিভ এবং ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। তারা পরিপক্ক। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা ওখানে জিজ্ঞেস করেন। তবে, রাজনীতিবিদরা অনেক কিছু বলেন, যাতে অন্যদের জন্য সতর্কবাণী থাকে। এবং সেটার আক্ষরিক অর্থে কীভাবে হবে, আমি বলতে পারবো না। মন্ত্রী বলেন, আমরা ফেলে দেওয়ার দেশ না। আমরা মোটামুটিভাবে এখন আগের মতো দরিদ্র, ক্লিষ্ট, দানের উপরে আমরা থাকি না। আমাদের জাতির গর্ব আছে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও অবস্থান নিয়ে গর্বিত। আমরা বিভিন্ন রকম প্রতিকূল পরিবেশেও বিজয়ের জাতি, আমরা অর্জন করেছি। সুতরাং কেউ চোখ রাঙিয়ে আমাদের দিকে তাকালেই আমরা ভড়কে যাব- এমন না। এটা হচ্ছে ইঙ্গিত যে, বাংলাদেশ হচ্ছে বিজয়ের জাতি, আমরা কোনো ধরনের প্রলোভনে, কোনো প্রতিকূল পরিবেশে আমরা ঘাবড়ে যাবো না, আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবো, মোকাবিলা করার ক্ষমতা আছে। সেই বক্তব্যটাই বোধভ্রমণ সতর্কতা দুঃখজনক: নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে সতর্কভাবে চলাচলে মার্কিন দূতাবাস যে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে সেটাকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আজকে থেকে প্রায় সাত-আট মাস পরে নির্বাচন হবে আর ইতিমধ্যে মার্কিন দূতাবাস তাদের নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। এটা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন যে, তারা কেন করেছে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ঠিক কোনো ধরনের হত্যা নেই, রাস্তাঘাটে কেউ গুলি করে কাউকে মারে না, কোনো সভা-সমিতিতে কাউকে কেউ মারে না, আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা অজ্ঞাতভাবে রাস্তার উপরে প্রায় শূন্য। মন্ত্রী বলেন, আর মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে তারা এত ক্ষেপবে কেন, কোনো অন্যায়তো মার্কিন নাগরিকরা এখানে করছে না। এটা খুবই অদ্ভুত। আমি জানি না, ওদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তারা কেন করেছে? দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উন্নত’- আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে এগুলোর কোনো কারণ নাই যে, এই সহিংসতা হবে, যার জন্য অগ্রিম একটা সতর্কতা দিতে হবে। সুতরাং আমি এটা জানি না, তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন। মন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ মনে করেন আমেরিকা যাওয়া বাংলাদেশিদের সতর্ক করা উচিত। কারণ আমেরিকা গেলে মলে বা বারে কিংবা স্কুলে সাবধানে থাকতে হবে। এটাই বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা-ই হোক, এটা তাদের ব্যাপার। নিশ্চয়ই তাদের কোনো বিষয়-আশয় আছে, সেটা তারা ভালো

ওদিকে সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, চলতি বছরে তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাতার সফর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের দৃশ্যমান উপস্থিতির পাশাপাশি কাতারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থানের চিহ্ন বহন করে। কাতার ইকোনমিক ফোরাম-২০২৩ এ যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর দোহা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী ওই মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী মোমেন বলেন, এই ফোরামটি সম-সাময়িক ৯টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- জ্বালানি নিরাপত্তা; প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন; বাজার ব্যবস্থা পরিবর্তন; স্বাস্থ্য খাতে উদ্ভাবন; জলবায়ু অর্থায়ন; বাণিজ্য কৌশল ও ব্যবস্থা; চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে জনশক্তি; ডিজিটাল বিশ্বের খেলাধুলা; এবং বিদেশি বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ। আয়োজকরা জানিয়েছে, বিশ্বের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা এসব বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন, তার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাতার সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমীর তামিম বিন হামাদ আল থানির আমন্ত্রণে কাতার ইকোনমিক ফোরাম ২০২৩-এ যোগ দিচ্ছেন জানিয়ে বলা হয়, আগামী ২৫শে মে সকালে সরকার প্রধান দেশে ফিরবেন।