যে কৌশলে ধরা পড়েন সাংবাদিক নাদিম হত্যার প্রধান আসামি বাবু

জামালপুরে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু। সম্প্রতি চেয়ারম্যান বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সাংবাদিক নাদিম। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলপরে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম নাদিম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়ায় বাবু আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। এরই জেরে গত ১৪ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে বাবুর পরিকল্পনা এবং তার উপস্থিতিতেই সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

এদিকে নাদিম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ছায়াতদন্ত শুরু করে র্যাবের গোয়েন্দা দল। এমনটাই জানিয়েছেন র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে নিশ্চিত করে র্যাব। ফুটেজে রেজাউলকে প্রথম দেখা যায়। আর তাকে নিয়েই কাজ শুরু করে র্যাব। তবে হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত বাবুকে ধরাটা সহজ ছিল না। কারণ সাংবাদিক নাদিম মারা যাওয়ার খবরে আত্মগোপনে চলে যান বাবু। এ ছাড়া ঘটনার পর থেকেই বাবুর মোবাইল ফোন সেটটি বন্ধ পাওয়া যায়।

র্যাব জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু, মনিরুজ্জামান মনির ও জাকিরুল ইসলাম একসঙ্গে গা-ঢাকা দেন। এই পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেয় র্যাব। বাবুর মোবাইল ফোন সেটটি বন্ধ থাকলেও তার দুই সহযোগীর ফোন সেট খোলা ছিল। এতেই বেরিয়ে আসে বাবু আত্মগোপনে থাকা আস্তানার ঠিকানা। তার দুই সহযোগীর মোবাইল ফোনে কথোপকথন থেকে মিলে যায় সেই তথ্য। আর এই সূত্র ধরেই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়।

র্যাব আরও জানায়, চেয়ারম্যানের সহযোগী জাকিরুল ইসলাম ও মনিরুজ্জামান মনির মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় কথাও বলেছেন। চেয়ারম্যানের এলাকা থেকে আমাদের গোয়েন্দা তথ্য ছিল, মনির ও জাকিরুলকে সঙ্গে নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন বাবু। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে শনিবার ভোরে সেখানে অভিযান চালানো হয়। গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে।

ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাকে শুক্রবার রাতে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ। তার নির্দেশেই সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজন ও সহকর্মীদের। পুলিশও প্রাথমিক তদন্তে এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে।

উল্লেখ্য, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলম বাবুকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জামালপুর জেলা প্রতিনিধি গোলাম রাব্বানী নাদিম। গত ১৪ জুন রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে অস্ত্রধারী ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। 

পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এর পর রাত ১২টায় সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন বেলা পৌনে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানীর স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুলকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।