বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক হারাম

আধুনিক বিশ্বের বহু দেশেই প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক চলছে যা লিভ টুগেদার নামে পরিচিত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। অন্যান্য দেশের মতো এ দেশের তরুণ-তরুণীদের মাঝে অবাধ মেলামেশার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। ফলে তরুণ-তরুণীরা জড়িয়ে পড়ছে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে। পরিণতিতে ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ। পরে লোকলজ্জা বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে করছে গর্ভপাত। শহরের বিভিন্ন আবর্জনার স্তূপ, ডাস্টবিন আর ড্রেনে ঘনঘনই উদ্ধার হচ্ছে নবজাতকের লাশ। যা বর্বরতম ঘৃণ্য একটি অপরাধ। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হারাম এবং মহাপাপ। মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে চলার কারণেই জড়িয়ে পড়ছে এমন গর্হিত কাজে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পন্থা’ (বনি ইসরাইল : ৩২)। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন ব্যভিচার করে, তখন তার ভেতর থেকে ইমান বেরিয়ে যায়, এরপর তা তার মাথার ওপর ছায়ার মতো অবস্থান করতে থাকে। এরপর সে যখন তা থেকে তাওবা করে, তখন তার ইমান আবার তার কাছে ফিররাসূল (সা.) আরও বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদের পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক কঠোর শাস্তি নির্ধারিত থাকবে। তারা হচ্ছে-বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী গরিব’ (মুসলিম ও নাসায়ী)। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আমি স্বপ্নে একটি চুলা দেখতে পেলাম যার ওপরের অংশ ছিল চাপা আর নিচের অংশ ছিল প্রশস্ত আর সেখানে আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল, ভেতরে নারী-পুরুষরা চিৎকার করছিল। আগুনের শিখা ওপরে এলে তারা ওপরে উঠছে, আবার আগুন স্তিমিত হলে তারা নিচে যাচ্ছিল, সর্বদা তাদের এ অবস্থা চলছিল, আমি জিবরাইল (আ.)কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? জিবরাইল (আ.) বলল, তারা হলো, অবৈধ যৌনচারকারী নারী ও পুরুষ (সহিহ আল-বুখারি)।

বর্তমানে আমরা নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে খুব সাধারণ ব্যাপার হিসাবেই দেখি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, যাত্রাপথে সহযাত্রী হিসাবে, ফেসবুক বা অনলাইনে পরিচিতির খাতিরে নারী পুরুষের মাঝে বেশ সখ্য গড়ে ওঠে। কিন্তু ইসলামি দৃষ্টিকোণে এগুলোও নিষিদ্ধের আওতায়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘কোন বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের জিনা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার জিনা, অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের জিনা, ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের জিনা, খারাপ কথা শোনা কানের জিনা আর জিনার কল্পনা করা ও আকাঙ্ক্ষা করা মনের জিনা। অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়’ (সহিহ আল-বুখারি)।

কিন্তু তাই বলে ব্যভিচারের ফলে জন্মলাভ করা সন্তানকে শান্তির ধর্ম ইসলামে হত্যা করে ফেলতে বলা হয়নি। বরং তার সুরক্ষা এবং ভরণপোষণের ব্যাপারে তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার ধর্ম ইসলামে সেই শিশুকে নিষ্পাপ এবং সেই পাপ কাজের অংশীদার না বানানোর কথা বলা হয়েছে। ইসলামে শরিয়াহ মতে ব্যভিচারের ফলে জন্মলাভ করা সন্তান মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে যেহেতু তার পিতা অবৈধ এবং মাকেই তার ভরণপোষণের দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনে তো একটি পাপ করছেই উপরন্তু নবজাতককে হত্যা করে আরও একটি মহাপাপ করছে। আর এ জঘন্যতম অপরাধ বন্ধে আমাদের তৎপর হতে হবে। জীবনে ধর্মীয় রীতিনীতি, বিধিনিষেধ এবং অনুশাসন মেনে চলার পাশাপাশি বেশ কিছু বাড়তি সতর্কতা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এ রকম ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড বিনাশ করা সম্ভব হবে। যেমন : সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় জ্ঞানের প্রসার ঘটাতে হবে, নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এ অবৈধ সম্পর্কের বিধিনিষেধ এবং পরকালের শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে। তরুণ-তরুণীদের মধ্যকার অবাধ মেলামেশা নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করতে হবে। নবজাতক হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান কার্যকর করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে হবে।