ইমাম মাহদির আত্মপ্রকাশের পূর্বে পৃথিবীতে যা যা ঘটবে

অসংখ্য সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের পূর্বে পৃথিবীতে যখন পরিত্রাণহীন দুঃখ, বিরতিহীন পাশবিকতা, প্রতিকারহীন দুঃশাসন চলবে। সত্যকে লাঞ্ছিত করবে মিথ্যা, ধর্মকে নির্বাসিত করবে অধর্ম, ন্যায়কে পদপিষ্ট করবে অন্যায়যখন সুন্দর ও কল্যাণের জন্য চরম দুর্দিন, সদাচার ও সততার জন্য ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য ঘোরতর দুর্যোগ, নারী ও দুর্বলের জন্য মৃত্যুময় চারপাশ। কোনো নীতির শাসন চলবে না, কেবলই চলবে ‘জোর যার মুল্লুক তার’- এর রাজত্ব। 

মানুষের সমাজ ও জীবন পাপাচার, ব্যভিচার ও স্বেচ্ছাচারের অন্ধ আঘাতে বিবস্ত্র। জুলুমের নিশ্ছিদ্র প্রাচীরের তলে জীবন ও জনতা; আরবে, দেশে দেশে, বিশ্বময়। 

দুনিয়ার বড় বড় জাতি ও সভ্যতা আধিপত্যের লড়াইয়ে ক্লান্ত৷ ক্ষয়িষ্ণু। ঠিক তখনই স্বর্গের সুরভি নিয়ে, চিরসত্যের মহিমা নিয়ে, খোদায়ি প্রজ্ঞা ও পবিত্রতার জীবন্ত প্রতিফলন হয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র হজরত হাসানের (রা.) বংশের উজ্জ্বল নক্ষত্র, খলীফাতুল মুসলিমীন, ‘মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ’ ওরফে ইমাম মাহদি (রা.)। 

(১) হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইমাম মাহদির আগমনের পূর্বে পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষকে হত্যা করা হবে। আর এক তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাবে। আর এক তৃতীয়াংশ মানুষ অবশিষ্ট থাকবে। (কিতাবুল ফিতান: নুআইম বিন হাম্মাদ-৯৫৯)

বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি ও হজরত আলীর (রা.) বক্তব্যের প্রতি লক্ষ করলে গুণীজনদের মনে হয় আগত পৃথিবী মারাত্মক ধরনের এক যুদ্ধের মুখোমুখি। মনে হচ্ছে- পৃথিবী পরমাণু হামলার মুখে। কারন, পরমাণু যুদ্ধ ছাড়া তিনভাগের একভাগ মানুষ নিহত হওয়া এবং একভাগ মানুষ মারা যাওয়া সম্ভব নয়। 

তবে এ ধরনের যুদ্ধকে হাদিসে ‘আল-মালহামাতুল কুবরা’ বলা হয়নি। কেননা, ‘মালহামাতুল কুবরা’ তো ইমাম মাহদি আসার পরে সংগঠিত হবে। তাই আমাদের চোখ-কান খোলা রেখে সর্বোচ্চ পর্যায়ের সতর্ক থাকা উচিত।

(২) হজরত যী-মিখবার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা খ্রিস্টানদের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তি করবে। অতঃপর তোমরা এবং খ্রিস্টানরা মিলে তৃতীয় কোনো শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তোমাদের সাহায্য করা হবে। ফলে তোমরা প্রচুর পরিমাণে গনিমতের মাল অর্জন করবে। অতঃপর তোমরা নিরাপদে ফিরে আসবে। এরপর যখন তোমরা সবুজ-শ্যামল উঁচু টিলাময় এক ভূমিতে অবতরণ করবে, তখন একজন খ্রিস্টান ক্রুশ উঁচু করে বলবে, ক্রুশের বিজয় হয়েছে। 

এ কথা শুনে মুসলমানদের থেকে একজন ‘বরং আল্লাহ তাআ'লার বিজয় হয়েছে’ বলে রাগে ক্রুশ ভেঙে ফেলবে। ফলে খ্রিস্টানরা পূর্বের কৃত চুক্তি ভেঙে মহাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। তখন ঈমানদারগণও অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়বে। মুসলমানদের এ দলটিকে আল্লাহ তাআ'লা শাহাদাতের মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করবেন। (আবূ দাউদ-২৭৬৭/ইবনে মাজাহ-৪০৮৭/মুসনাদে আহমাদ-১৬৮২৫/মুসতাদরক-৮৫১৯)

যদি আমরা গভীরভাবে এ হাদিসের প্রতি এবং বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ করি, তাহলে আমাদের সামনে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠবে যে, খ্রিস্টানদের একটি দেশ মুসলমানদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হবে। 

(৩) হজরত আমর বিন শুআইব (রহ.) তার পিতা, তারা দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জুলকাদা মাসে গোত্রসমূহের মাঝে পারস্পারিক মতানৈক্য দেখা দিবে। প্রতিশ্রুতি ভেঙে দেওয়া হবে। ফলে হাজীদের লুট করা হবে। মিনা প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হবে। তাতে প্রচুর পরিমানে হত্যাযজ্ঞ হবে। রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত আকাবাতুল জামরায়ও রক্ত প্রবাহিত হবে। পরিস্থিতি এ পর্যন্ত পৌঁছবে যে, তাদের সাথী (ইমাম মাহদি) পালিয়ে কাবা শরীফের রুকন এবং মাকামে ইব্রাহিমের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান নিবেন। অতঃপর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সকলকে তার হাতে বায়াত করা হবে। 

তাকে বলা হবে, আপনি আমাদের বায়াত নিতে অস্বীকার করলে আমরা আপনার গর্দান উড়িয়ে দিব। অতঃপর বদর যোদ্ধাদের সংখ্যা পরিমাণ (৩১৩ জন) লোক তার হাতে বায়াত গ্রহণ করবে। তাদের প্রতি আসমান-জমিনের বাসিন্দাগণ সকলেই খুশি থাকবেন। (মুসতাদরাক-৪/৫৪৯)

(৪) ইবনে হাজার হাইতামী (রহ.) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত নিরপরাধ লোকদের একটি বড় অংশকে হত্যা করে ফেলা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ইমাম মাহদির আগমন ঘটবে না। এ ফেতনা থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। দ্রুততার সাথে এ ফেতনা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়বে। 

এরপর যখন আসমান জমিনের মাঝে এ ধরনের হত্যাযজ্ঞের ধারা বন্ধ হবে, তখন ইমাম মাহদির আগমন হবে। (আল-কওলুল মুখতাসার ফী আলামাতিল মাহদীল মুনতাযার-২১,২২,৩৭)

এ বক্তব্যের বাস্তব চিত্র তো এখন আমাদের সামনে। নিরপরাধ লোকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে; কিন্তু এর শেষ কেথায়? এজন্য বিজ্ঞজনেরা মনে করেন, নিরপরাধ লোকদের হত্যাযজ্ঞের এ ধারা পরমাণু যুদ্ধের মাধ্যমে শেষ হবে। 

এরপর একপর্যায়ে গিয়ে যখন পুরো পৃথিবী জুলুম-অত্যাচারে ভরে উঠবে, ঠিক তখনই ইমাম মাহদি (রা.) এসে পৃথিবীকে ন্যায়-নিষ্ঠায় ভরে দেবেন।।