ইউটিউবে ভিউ বাড়াতে নিজের বিমান বিধ্বস্ত, ৬ মাসের জেল

ইউটিউবে ভিউ বাড়ানোর জন্য এক ব্যক্তি নিজের বিমান ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ঘটনায় ফেলেন। পরে তদন্তকারীদের কাছে এ নিয়ে মিথ্যে তথ্য দেন। এ অভিযোগে তাকে ৬ মাসের জেল দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালত। ওই ব্যক্তির নাম ট্রেভর জ্যানিজের ইউটিউব চ্যানেলের ভিউ বাড়াতে ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি এমন ছলাকলার আশ্রয় নেন। পরে বিমানটির দুর্ঘটনার ভিডিও পোস্ট করেন ইউটিউবে। এর শিরোনাম- আই ক্র্যাশড মাই এয়ারপ্লেন। অর্থাৎ আমার বিমান দুর্ঘটনায় পড়েছে। ওই বছর নভেম্বরে ক্যারোলাইনার দক্ষিণাঞ্চলের ওপর দিয়ে তিনি বিমান ওড়ানোর সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ইঞ্জিনে সমস্যা হলে কেমন অবস্থা সৃষ্টি হয় সেই অভিজ্ঞতা নিতে তিনি এমন কান্ড ঘটিয়েছিলেন। সেই মুহূর্ত ধারণ করেন ক্যামেরায়। নাটকীয় এই ফুটেজ ইউটিউবে কয়েক লাখ বার ভিউ হয়েছে। ট্রেভর জ্যাকবের বয

ভিডিওতে তাকে দেখা যায়, এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট বিমানটি থেকে তিনি বেরিয়ে আসছেন। কিন্তু এক হাতে তার সেলফি স্টিক। পরে লস পাদ্রেস ন্যাশনাল ফরেস্টে সবজি চাষের ঘন একটি এলাকায় প্যারাস্যুট দিয়ে নামেন। বিমানটিতে সব খানে ক্যামেরা বসানো ছিল। ফলে জঙ্গলের মধ্যে কোথায় তা পতিত হচ্ছে সেই দৃশ্যও ধারণ করা হয়। এমনকি বিধ্বস্ত হয়ে যেখানে পড়ে, সেখানকার দৃশ্যও আছে ধারণ করা ভিডিওতে। ট্রেভর জ্যাকব সাবেক অলিম্পিক স্নোবোর্ডার। পরে বিমানে স্থাপন করা ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। 

ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পরে ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড এবং ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন এই দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু করে। বিমানের ধ্বংসস্তূপ জ্যাকবকে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তাদের তিনি বলেন, বিমানটি কোথায় পতিত হয়েছে তা তিনি জানেন না। 

সোমবার সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট অব ক্যালিফোর্নিয়ার এটর্নির অফিস থেকে বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বিমানটির ধ্বংসস্তূপের কাছে একজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে হেলিকপ্টারে করে উড়ে যান জ্যাকব। সেখান থেকে তিনি ধ্বংসস্তূপ সংগ্রহ করেন। সেসব সান্তা বারবার কাউন্টিতে র্যাঞ্চো সিসকোতে নিয়ে যান। তারপর জ্যাকবের একটি পিকআপ ট্রাকে তা বোঝাই করা হয়। এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট বিমানটির এসব অংশকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয় এবং একটি ময়লার বিনে ফেলে দেওয়া হয় লোমপক সিটি এয়ারপোর্টে ও এর আশপাশে। উদ্দেশ্য, যাতে বিমান দুর্ঘটনার কোনো তথ্যপ্রমাণ না থাকে। 

ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন যুক্তরাষ্ট্রে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। তারা ২০২২ সালের এপ্রিলে জ্যাকবের পাইলট লাইসেন্স ধরে টান দেয়। তদন্ত শেষে জ্যাকব তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসেন। তিনি বিমান ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ফেডারেল তদন্ত আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফেডারেল তদন্তকারীরা ঠিকই তাকে ধরে ফেলে। এ সময়ও তিনি মিথ্যে কথা বলেন। 

তাদেরকে বলেন, বিমানটি সম্পূর্ণ জ্বালানিহীন হয়ে পড়েছিল। 

ফেডারেল প্রসিকিউটররা বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে প্রভাবিত করতে এই অপরাধ করে থাকতে পারেন জ্যাকব। তিনি নিজেকে খবরের অংশ বানাতে এবং তা থেকে আর্থিক সুবিধা আদায় করতে চেয়েছিলেন। এ ধরণের অপরাধ সহ্য করা যায় না। 

জ্যাকবের মূল ভিডিও এরই মধ্যে ইউটিউব থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রায় দু’বছর আগে এই ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। তখন থেকেই পাইলট ও এ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞরা জ্যাকবের সমালোচনা শুরু করেন। 

তাদের অনেকে বলেছেন, দৃশ্যত ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে তা নতুন করে স্টার্ট দেননি জ্যাকব। এক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যরা বলছেন, তিনি সহজেই একটি ল্যান্ডিং স্পটে অবতরণ করতে পারতেন।