সোনার ধানে হাসছে হাওর, হাসছে কৃষক

নন্দিত সিলেট :টানা দুই মৌসুমে বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল সিলেটের হাওরাঞ্চল। ফলে কৃষক হারিয়েছিলেন তাদের সোনার ফসল। চারদিকে বইছিল হাহাকার, শোকের মাতম। কৃষক পরিবারগুলোর মুখের হাসি রূপ নিয়েছিল সব হারানোর বিষাদে। তবে চলতি মৌসুমে এখনও পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আবারও হাওরের কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। হাওরে জেগেছে প্রাণ। চৈত্রের মাঝামাঝি এই সময়টায় হাওরের দিকে যতদূর চোখ যায় দেখা মিলে স্বপ্নের সোনালী ধানের। বসন্ত বাতাসে সোনালী ধানের শীষগুলো যেন কৃষাণ-কৃষাণীদের শ্রমঘামের প্রতীক হয়ে দুলছে। কৃষকরাও প্রস্তুত সোনার ধান গোলায় তোলার কাজে। ইতোমধ্যে কিছু এলাকায় ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে। ফলে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে হাওরাঞ্চলে। তবে, ধান তোলার জন্য শ্রমিক সংকটই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের হাওরাঞ্চলগুলোতে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবছর লক্ষ্য মাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া ধান তুলতে পারলে হাওরের মানুষের দুঃখ অনেকাংশে লাঘব হবে বলে আশা করছেন তারা। কৃষকরা যাতে দ্রুত ফসল তুলতে পারেন সে জন্য কৃষি বিভাগ সর্বদা নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সিলেট আঞ্চলিক অতিরিক্ত পরিচালক মো. আলতাবুর রহমান। সিলেট কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর সিলেট বিভাগের ৪ লাখ ৮১ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে ৮৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর, মৌলভীবাজারে ৫৪ হাজার ১২ হেক্টর, হবিগঞ্জে ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩০ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২২ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এবছর লক্ষ মাত্রার চেয়ে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি চাষ হয়েছে । সিলেটে ২ হাজার ৯শ হেক্টর, মৌলভীবাজারের ১ হাজার ৫৪১ হেক্টর, হবিগঞ্জে ৬ হাজার ১২৫ হেক্টর এবং সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত চাষ হয়েছে। সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার মাইজাইল হাওরপাড়ের কৃষক জমসেদ আলী উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ব্রেকিংনিউজকে জানান, “এবছর ভালো ধান হয়েছে। হাওরের ধান পাঁকতে শুরু করেছে। তারা কিছু কিছু কাঁটছেনও। গত বছর সম্পূর্ণ ধান তলিয়ে যাওয়ায় সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও কৃষি বিভাগের তৎপরতায় এবছর ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছেন তিনি।” সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের বিছরাকান্দা গ্রামের কৃষক পারভেজ বলেন, “বিগত ২ বছর ফসলহানিতে কৃষকদের অনেকেই প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন। এবছরের ফসল নিয়ে তারা খুবই উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশাবাদী কৃষক।’ তিনি বলেন, ‘ধান হাওরের প্রাণ। ধানের উৎপাদন ভালো হলে হাওরের মানুষ ভালো থাকে।” কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেটের অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিচালক মো. আলতাবুর রহমান বলেন, “গত মঙ্গলবার তিনি হবিগঞ্জ ও গতকাল মৌলভীবাজার জেলায় ফিল্ড ভিজিটে গিয়েছেন। এবছর খুবই ভালো ধান হয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসের ১৫/১৬ তারিখ পর্যন্ত সময় পাওয়া গেলেও ৬০ ভাগ ধান তোলা সম্ভব হবে। আর পুরো এপ্রিল সময় পেলে শতভাগ ধান কৃষকরা গোলায় তুলতে পারবেন।” কৃষকদের দ্রুত ধান তোলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “ধানের ৮০ ভাগ পাকলেই দ্রুত কেটে ফেলতে হবে। কোনও কোনও কৃষক শতভাগ ধান পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এতে ধানের রং নষ্ট হয় এবং অনেক ধান ঝরেও পড়ে।