খাবার ও সুরক্ষা সামগ্রী সংকট: চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ডেলিভারি কমেছে

নন্দিত ডেস্ক;ছুটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজ থেকে পণ্য হ্যান্ডলিং তথা ওঠানামা অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও কমেছে ডেলিভারি। লম্বা ছুটির কারণে দেশের অনেক কল-কারখানায় কাজ বন্ধ, সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মীদের ছুটিতে যাওয়াসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে বন্দর থেকে গড়ে প্রায় সাড়ে চার হাজার টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভেলেন্ট ইউনিটস) আমদানি কনটেইনার ডেলিভারি হলেও গত দুই দিনে তা হাজারের নিচে নেমেছে। শুক্রবার ৯০০ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি হয়। শনিবার তা কমে ৩২৬ টিইইউএসে নেমে আসে। ওষুধ, খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্য এ মুহূর্তে তেমন একটা ডেলিভারি নিচ্ছেন না আমদানিকারকরা। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ২৪ ঘণ্টাই সেবা দিয়ে যাচ্ছে। যানবাহন ও খাবার দোকান বন্ধ থাকায় বন্দরে হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। তবে যে পরিমাণ শ্রমিক রয়েছে তা দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে কাজ চলছে। যদিও এসব শ্রমিক করোনা আতঙ্কে রয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক শনিবার যুগান্তরকে বলেন, লম্বা ছুটিতেও বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পালাক্রমে অফিস করছেন। অপারেশনাল কার্যক্রমে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জাহাজের আসা-যাওয়া আছে আগের মতোই। জেটিতে পণ্য ওঠানামা চলছে। তবে যানবাহন বন্ধ থাকায় বন্দর এলাকার বাইরে থাকা কিছু শ্রমিক আসতে পারেননি। এছাড়া বন্দর জেটি সংলগ্ন খাবারের হোটেল বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের কিছুটা অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জেটি গেটসংলগ্ন কিছু হোটেল ও ক্যান্টিন খোলার ব্যবস্থা করেছি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে যাতায়াত সমস্যাসহ নানা অভিযোগে বন্দরের দুই নম্বর জেটি থেকে বারো নম্বর জেটির শ্রমিকরা শুক্রবার রাত ৮টা থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখেন। এসব শ্রমিক বেসরকারি বার্থ অপারেটরদের অধীনে কাজ করেন। তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ বিভিন্ন সুবিধার দাবি জানান। পরে বার্থ অপারেটর ও বন্দর কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শ্রমিকরা কাজ শুরু করেন। আজ (রোববার) বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ওই বৈঠকের ওপরই নির্ভর করছে শ্রমিকরা পরবর্তী সময়ে কাজ অব্যাহত রাখবেন কিনা। এদিকে নেপথ্যের কোনো শক্তি শ্রমিকদের উস্কে দিয়ে বন্দর বন্ধ করে দিতে চাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থ, শিপ হ্যান্ডলিং অ্যান্ড টার্মিনাল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফজলে ইকরাম চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের দিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতির পর শনিবার শ্রমিকরা কাজ করেছেন। তবে তারা করোনার অভিযোগ তুলে কার্যত মজুরি বাড়ানোসহ অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। বন্দর একটি জরুরি সেবাদাতা সংস্থা। সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বন্দরগুলো এ অবস্থাতেও পুরোপুরি সচল। বন্দরে যেসব বিদেশি জাহাজ আসে সেগুলোর নাবিকদের চেক করেই জাহাজে তোলা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পর তাদের প্রয়োজন হলে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এ অবস্থায় করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা তেমন নেই। বিষয়টিকে একটা ইস্যু বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফজলে ইকরাম আরও বলেন, এখনও যে পরিমাণ শ্রমিক আছে তারা কাজ চালানোর জন্য যথেষ্ট। শনিবার জাহাজ ছেড়ে গেছে। পণ্য খালাস হয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের পর শ্রমিকরা কী সিদ্ধান্ত নেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। সূত্র জানায়, আমদানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাসের দায়িত্ব পালন করে সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। ২৬ মার্চ ছুটি শুরু হলে এজেন্টরা তাদের কর্মচারীদের ছুটি দেয়া শুরু করেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ সিএন্ডএফ এজেন্ট অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। যাদের জরুরি রফতানি কিংবা আমদানি পণ্য রয়েছে, তারা অল্প কিছু কর্মচারীকে রেখে দিয়েছেন। এ কারণে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি কমেছে। চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু জানান, বন্দর সচল আছে। চাইলেই পণ্য ডেলিভারি নেয়া যাচ্ছে। কাস্টমসও সীমিত আকারে চালু আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এ মুহূর্তে ওষুধ এবং খাদ্যপণ্যের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্য নিতে চাইছেন না আমদানিকারকরা। কারণ অনেক কল-কারখানায় এরই মধ্যে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সিএন্ডএফ কর্মচারীরাও ছুটিতে চলে গেছেন। এ অবস্থায় সামনের দিনগুলোতে ডেলিভারি আরও কমে যেতে পারে। তবে নিত্যপণ্যের বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ খাদ্যপণ্যবোঝাই জাহাজ আসা অব্যাহত আছে।