সিলেটে পুলিশের কাছে নেই কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা

সিলেটে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আবারো তৎপর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তারা তুচ্ছ ঘটনায় সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে।পাড়া-মহল্লায় দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা দেওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া, মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে এসব কিশোররা।দীর্ঘদিন থেকে কিশোরগ্যাংয়ের তৎপরতা থাকলেও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে কিশোর গ্যাংয়ের কোনো তালিকা নেই তাদের হাতে।

সম্প্রতি সিলেটের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।এরমধ্যে পবিত্র রমজান মাসে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হামলায় আহত হন ৪জন।গত ৭ এপ্রিল রাতে নগরীর রিকাবীবাজার পয়েন্টে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের হাতে ছুরিকাঘাতে আহত হন দুই ছাত্রলীগ কর্মী।গত ২৯ মার্চ চারাদিঘীরপাড়ে স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।৩১ মার্চ রাতে কোম্পানীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে যুবক আহত হন।এ ঘটনায় একজনকে আটক করে পুলিশ।

জানা যায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হাজরাই, কদমতলী, টার্মিনাল, রেল স্টেশন, তেলিরাই, নগরীর বন্দরবাজার, রিকাবীবাজার, ক্বীন ব্রিজ এলাকা, আম্বরখানা, এয়ারপোর্ট রোর্ড, শাহী ঈদগাহ, টিলাগড়, শাহজালাল উপশহর, বাগবাড়ি, সুবিদবাজারসহ কয়েকটি এলাকায় কিশোর অপরাধীরা সক্রিয়।

কিশোর অপরাধীরা, স্কুল-কলেজ ও এলাকায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আধিপত্য বিস্তার কিংবা দ্বন্দ্ব মেটাতে কয়েকজন কিশোর মিলে গড়ে তুলছেন গ্যাং। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্কুল-কলেজ, মেডিকেল পাড়া-মহল্লার মোড়সহ বিভিন্ন স্পটে কিশোর-তরুণরা মিলে নিয়মিত আড্ডা দিতে দেখা যায়। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা জড়াচ্ছে হামলা, হত্যাকান্ড, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে। নগরী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও রয়েছে এমন গ্যাং। কোনো কোনো এলাকায় রয়েছে এমন একাধিক গ্রুপ। আধিপত্য বিস্তার ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রায়ই এসব গ্যাংয়ের কিশোররা জড়িয়ে পড়ে সংঘাতে।

পুলিশ বলছে, এসব কিশোর অপরাধী ও কিশোর গ্যাংদের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার রয়েছে।কোথাও কোনো অপরাধের খবর পেলে তারা সাথে সাথে অ্যাকশনে যাচ্ছে।

পুলিশের অন্য একটি সূত্র বলছে- কিশোর অপরাধীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।এর আগে গত বছর এসএমপি’র ৬টি থানা এলাকায় বেপরোয়া এই কিশোর গ্যাংকে থামাতে একটি তালিকা তৈরী করা হয়।এ তালিকায় ২২০ জন তরুণের নাম ছিল। তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে।

সচেতন মহল বলছেন, কিশোর অপরাধ রোধে পুলিশের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের সকল শ্রেণিপেশার লোকজন এগিয়ে আসতে হবে।আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কিশোর গ্যাংয়ের মূল নেতৃত্বদানকরাীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

এব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদ্বীপ দাস বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের বিট অফিসাররা কাজ করছেন।তারা খোঁজ-খবর নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।তবে, এই মূহুর্তে আমাদের কাছে কেউ আটক বা গ্রেফতার নেই।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন সিলেট জেলার আহবায়ক অধ্যাপক জান্নাত আরা খান পান্না বলেন, কিশোর অপরাধ রোধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।এজন্য প্রথমত শিশুদের জন্য মানবিক পরিবেশ তৈরীর প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।তাছাড়া সমাজে সকল শ্রেণীর পরিবারের কিশোররা পড়ালেখা ও অন্যান্য সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যকলাপে জড়ানোর সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।সমাজসেবামূলক সংগঠনগুলোর প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে ও এসব কাজের চর্চা বাড়াতে হবে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (এসএমপি) কমিশনার মো.ইলিয়াস শরীফ বিপিএম (বার) পিপিএম বলেন, আমি আসার পর থেকে কিশোর গ্যাং রয়েছে বলে কিছু পাইনি।পেলে আইনী প্রদেক্ষপ নেওয়া হবে।কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে আমরা সোচ্চার রয়েছি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেটপ্রতিদিনকে বলেন, কিশোর অপরাধ কমাতে পুলিশের সাঁড়শি অভিযান পরিচালনা করা।এ ছাড়া পরিবারের দেখভালও জরুরি। পরিবারের কর্তাদের খেয়াল রাখতে হবে তাদের সন্তানেরা কোথায় যাচ্ছে কী করছে।সেই সাথে যে এলাকায় কিশোরগ্যাং রয়েছে সেই এলাকার মানুষরা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করা প্রয়োজন।

কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে রেঞ্জ পুলিশও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং ইতোমধ্যে সকল থানার অফিসার ইনচার্জদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।