শিক্ষক পেটানোয় ক্ষোভে উত্তাল নারায়ণগঞ্জের শিক্ষাঙ্গন

প্রায় দেড়শত বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষাঙ্গন। স্কুলটির বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত দুই অভিভাবক প্রতিনিধির শাস্তির দাবীতে মাঠে নেমেছেন শিক্ষকরাও।

বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে এই ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন।

তবে শিক্ষার্থীদের বেধে দেয়া ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বুধবার দুপুরে স্কুলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় তিনি স্কুলে ছুটে যান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রহিমা আক্তার। এ সময় তিনি স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সাথে বৈঠকের পর এ আশ্বাস দেন।

এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করে এর আগে বুধবার সকাল থেকে স্কুলের সব শিক্ষক ও ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন শুরু করে। তবে তারা স্কুলের ভেতরেই তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন, স্কুলের বাইরে বা কোনো সড়কে অবস্থান নেননি।

এ সময় তারা শ্লোগান দিতে থাকে- ‘বাবু ও আলম বহিষ্কার, হাই স্কুল পরিষ্কার’।

স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কামড়ায় প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে গত ১০ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকরা, শিক্ষার্থীরা।

তারা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রহিমা আক্তারকে জানান, গত ১০ এপ্রিল ভর্তি বাণিজ্য ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বাণিজ্য রুখে দেওয়ায় সিনিয়র শিক্ষক মাহবুবুর রহমানকে অভিভাবক প্রতিনিধি সরকার আলম ও ওয়াহিদ সাদত বাবু মারধর করেই ক্ষান্ত হননি, তাকে চরমভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। এই ঘটনার সময় মাহাবুবুর রহমানকে তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে শিক্ষকরা এগিয়ে আসার পর অভিভাবক প্রতিনিধি ওয়াহিদ সাদত বাবু দা-বটি খুঁজতে থাকেন এবং মাহাবুবুর রহমানের হাত কেটে নিতে চান।

তারা জানান, সরকার আলম এসময় ওই শিক্ষকের দাঁড়ি টেনে ছিঁড়ে ফেলারও হুমকি দেন। মাহাবুবুর রহমান রোযা রেখেছেন,তাকে মারবেন না, শিক্ষকদের এমন অনুরোধও শোনেনি সরকার আলম ও বাবু নামের ওই দুই প্রতিনিধি।

বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষকরা জানান, নিজের শিক্ষককে এভাবে মার খেতে দেখে স্কুলের শত শত শিক্ষার্থী ওই সময় ছুটে আসে। কিন্তু আমরা (শিক্ষকরা) তাদের বুঝিয়ে শান্ত রাখি।

শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেন, সরকার আলম ও ওয়াহিদ সাদত বাবু স্কুলের শিক্ষকদের নানাভাবেই হেনস্তা করে আসছেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে কেউ এতদিন মুখ খোলেনি।

বৈঠকে নিজের বক্তব্য দিতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেন লাঞ্ছনার শিকার সিনিয়র শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান। তিনি বলেন, আমি এই স্কুলের ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষক প্রতিনিধি। আমি চাই স্কুলটিকে দুর্নীতিমুক্ত করে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিব, এই আমার জন্য পরম পাওয়া। ভর্তি বাণিজ্য ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বাণিজ্য রুখে দেওয়ায় আমার উপর দুজন অভিভাবক প্রতিনিধি অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রকাশ্যে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সামনে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছে। এর আগেও একই ঘটনা ঘটেছিলো, কিন্তু তাদের ভয়ে প্রতিবাদ হয়নি। প্রতিবাদ হলে এমন ঘটনা পুনরায় ঘটতো না। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি কামনা করি।

স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলেন, অভিভাবক প্রতিনিধি সরকার আলম ও ওহিদ সাদত বাবু আমাদের স্যারকে মারধর ও লাঞ্ছিত করে হাত পা কেটে নেয়ার হুমকি দেয় এবং শিক্ষকের দাঁড়ি টেনে ছিঁড়ে ও হাত পা কেটে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। তাদের অবশ্যই সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সামনে মাফ চাইতে হবে। আমরা এই দুইজনের শুধু বহিষ্কার না স্কুলে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানাই। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা রাজপথে কঠোরতর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।

অপরদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রহিমা আক্তার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমরা আজকে এই অবস্থানে আসতে পেরেছি আমাদের শিক্ষকদের জন্যই। বাবা মায়ের চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোনো অংশে কম নয়। যা শুনলাম, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও মেনে নেয়ার মত নয়। জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে আমরা এসেছি। আমরা সবার কথা শুনেছি। এ ঘটনায় সবার সঙ্গে আলোচনা করে যে দোষী তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।