এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং

জ্বালানি সংকটের কারণে দেশে এলাকাভিত্তিক বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, ঘাটতির কারণে এলাকাভিত্তিক বিদ্যুতের লোডশেডিং শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এখন নিজস্ব গ্যাস ও আমদানি করা যতটুকু পর্যন্ত গ্যাস আনা যাচ্ছে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। কারখানায় গ্যাসের কিছুটা দিতে হচ্ছে। এ জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার কথা বলেন তিনি। এখন জ্বালানি স্বল্পতার কারণে সন্ধ্যায় ১০০০ থেকে ১৩০০ মেগাওয়াট ঘাটতি হচ্ছে। ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে গড়ে উৎপাদন ১৩ হাজার ৭০ মেগাওয়াট। পেট্রোবাংলার হিসাবে, একশ’ কোটি ঘনফুট এলএনজি আনার কথা থাকলেও আসছে ৫০ কোটিরও কম। অন্যদিকে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পর্ট মার্কেট থেকে এলএনজি না কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। সামনে হয়তো আরও হবে। আমাদের ১৩শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের দাহিদা রয়েছে। অন্যান্য সময়ে ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, গ্যাস ঘাটতির কারণে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। খুলনা জেলায় পল্লী বিদ্যুতে ৬৫ থেকে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে ঘাটতি ১৫ মেগাওয়াট। মাঝে মধ্যে ঘাটতি বেড়ে যায়। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমেছে। গত তিন দিন এমন চলছে। এটা শুধু খুলনায় নয়, সারা দেশে হচ্ছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গ্যাস এবং ডিজেল সংকটের কারণে বিদ্যুতের সরবরাহ কমেছে। দ্রুত এই অবস্থার অবসান ঘটবে বলে তিনি আশাবাদী। অপরদিকে খুলনাঞ্চলের গ্রামগুলোতে বিদ্যুতের লোডশেডিং ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বিএল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ফাহিম মুনতাসির সাফিন বলেন, দিনে-রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। বিশেষ করে রাতে পড়ার সময় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এতে লেখাপড়া করতে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশে সবকিছুতেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে। সেখানেও সমস্যা হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য গাজী ফয়সাল আলম বলেন, প্রতিদিন বিদ্যুৎ সকালে চলে যায় এবং রাত ১০টার ভেতরে মাঝেমধ্যে আসে। এই কারণে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় অনেক পিছিয়ে পড়ছে। কৃষিকাজেও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। গভীর রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় সিসিটিভি বন্ধ থাকে, এই সুযোগে চুরি-ডাকাতি বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাব মতে, গতকাল সন্ধ্যা ৮টায় সর্বোচ্চ চাহিদা ধরে প্রাক্কলিত ৯৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখানো হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় ২১৯ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ১৪৮ মেগাওয়াট, খুলনায় ১৩৩ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ১৩১ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ৯৫ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহে ৯৮ মেগাওয়াট, সিলেটে ৪৯ মেগাওয়াট ও রংপুর অঞ্চলে ১১২ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেখানো হয়েছে। বরিশাল বিভাগে বিদ্যুতের কোনো প্রাক্কলিত লোডশেডিং ধরা হয়নি। এই সময় সর্বোচ্চ চাহিদা ধরা হয় ১৪ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু এখন সর্বোচ্চ উৎপাদন করার সক্ষমতা ১৩ হাজার ৭০ মেগাওয়াট এবং সর্বনিম্ন উৎপাদন ১০ হাজার ৭৩৭ মেগাওয়াট। অন্যদিকে গত ৪ঠা জুলাই দেশে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।