শিবির সন্দেহে চমেক হোস্টেলে ৪ জনের ওপর লোমহর্ষক নির্যাতন

রাত তখন প্রায় ১টা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান হোস্টেলের বি ব্লকের ৮বি নাম্বার রুমে প্রবেশ করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী এমএ রাইয়ান ও মোবাশ্বির আহমেদ শুভ্রকে ‘জরুরি কথা আছে’ বলে তাদের ডেকে নেন। এরপর তারা সি ব্লকের ৩ সি নাম্বার রুম থেকে জাহিদ হোসেন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেনকেও ডেকে নেন। পরে তাদের দু’জনকে নিয়ে যাওয়া হয় কলেজ থেকে আড়াই বছরের বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা অভিজিৎ দাশের ১৭ এ নাম্বার রুমে। বাকি ২ জনকে নিয়ে যাওয়া হয় একই সময়ের জন্য বহিষ্কৃত রিয়াজুল ইসলাম জয়ের ১৯ এ নাম্বার রুমে। রাতভর তাদের উপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। নিজেদের শিবিরকর্মী হিসেবে স্বীকার না করা পর্যন্ত মারধর করা হয় তাদের। নির্যাতনের শিকার ২ শিক্ষার্থী এখন চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন। গত বুধবার চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারে অবস্থিত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান হোস্টেলে এই ঘটনা ঘটে।

ঘটনায় জড়িতরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসাবে পরিচিত। নির্যাতনের শিকার ৪ শিক্ষার্থী হলেন- জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল, সাকিব হোসেন, এম এ রায়হান, মোবাশ্বির হোসেন শুভ্র। তারা সবাই ৬২তম ব্যাচের ছাত্র। এদের মধ্যে জাহিদ হোসাইন ওয়াকিল এবং সাকিব হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জানা যায়, ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা বলে পরিচিত অভিজিৎ দাশ, রিয়াজুল জয়, জাকির হোসেন সায়াল, মাহিন আহমেদ ও ইব্রাহিম সাকিবের নেতৃত্বেই এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে অভিজিৎ ও জয় দু’জনই ক্যাম্পাসে মারামারির ঘটনায় আড়াই বছরের জন্য বহিষ্কৃত। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা হোস্টেল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন।জানা যায়, ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের পর সকালবেলা হাসপাতালে না নিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে রুমে আটকে রাখা হয়। কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী যেন তাদের হাসপাতালে নিতে না পারে সেজন্য তারা রুমের সামনে শিফট করে সারাক্ষণ পাহারাও দেয়। পরবর্তীতে নির্যাতিত এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক কলেজের অধ্যক্ষকে ফোনে বিষয়টি জানান। কলেজ অধ্যক্ষ পুলিশকে অবহিত করলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চকবাজার থানার পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে। এদের মধ্যে জাহিদ হোসেন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এদিকে ভুক্তভোগী বাকি ২ শিক্ষার্থীকে প্রাইমারি চিকিৎসা না দিয়ে জোর করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন নির্যাতনকারীরা। এদের মধ্যে আহত এমএ রাইয়ান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং মোবাশ্বের শুভ্র নারায়ণগঞ্জে একজন অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবজমিনকে বলেন, ‘বুধবার রাত ১টার দিকে প্রধান হোস্টেলের রুম থেকে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহারকারী কয়েকজন ছেলে আমাদের ধরে নিয়ে যায়। এরপর সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের নামে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাঠি এবং প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে মারধর করতে থাকে। মারতে মারতে তারা বলতে থাকে, যতক্ষণ ‘শিবিরকর্মী’ স্বীকার করবো না ততক্ষণ মারা হবে। একপর্যায়ে নির্যাতন সইতে না পেরে জান বাঁচাতে আমরা তাদের কথামতো নিজেদেরকে শিবির বলে স্বীকার করে নিয়েছি।এদিকে ভুক্তভোগী বাকি ২ শিক্ষার্থীকে প্রাইমারি চিকিৎসা না দিয়ে জোর করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন নির্যাতনকারীরা। এদের মধ্যে আহত এমএ রাইয়ান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং মোবাশ্বের শুভ্র নারায়ণগঞ্জে একজন অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বুধবার রাত ১টার দিকে প্রধান হোস্টেলের রুম থেকে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহারকারী কয়েকজন ছেলে আমাদের ধরে নিয়ে যায়। এরপর সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদের নামে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাঠি এবং প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে মারধর করতে থাকে। মারতে মারতে তারা বলতে থাকে, যতক্ষণ ‘শিবিরকর্মী’ স্বীকার করবো না ততক্ষণ মারা হবে। একপর্যায়ে নির্যাতন সইতে না পেরে জান বাঁচাতে আমরা তাদের কথামতো নিজেদেরকে শিবির বলে স্বীকার করে নিয়েছি।এই শিক্ষার্থী বলেন, একপর্যায়ে কেউ একজন আমার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। তখনই আমার পরিবার থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। তবে তারা প্রথমে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে সন্ধ্যায় পুলিশ আর অধ্যক্ষ ম্যাডাম এসে আমাদের দু’জনকে উদ্ধার করে। বাকি দু’জনকে এই নির্যাতনকারীরা জোর করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তাদেরকে কোনো চিকিৎসাও দেয়া হয়নি।চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের মঞ্জুর বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমাদেরকে অবহিত করে। পরে আমাদের ফোর্স গিয়ে ২ শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। এই বিষয়ে শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকরা থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। কাউকে আটকও করা হয়নি।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা অভিজিৎ দাশ বলেন, ‘কিছুদিন ধরে আমরা লক্ষ্য করছি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নিষিদ্ধ জামায়াত-শিবির আবারো সক্রিয় হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে- এমন তথ্য আমরা পেয়েছিলাম। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা তাদেরকে রুমে ডেকে আনি। সেখানে তারা একপর্যায়ে জামায়াত -শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

অভিজিৎ দাশ বলেন, তাদের ভাষ্যে চমেকে একটি সংঘবদ্ধ শিবিরের চক্র কাজ করছে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ অবগত থাকা সত্ত্বেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছিল না। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ চকবাজার থানায় দাখিল করা হয়েছে। তবে তাদেরকে কোনো ধরনের মারধর করা হয়নি। আঘাতের চিহ্নগুলোর বিষয়ে আমরা অবগত নই। 

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পরিবারের অভিযাগের ভিত্তিতে আমরা পুলিশ নিয়ে দু’জনকে উদ্ধার করেছি। বাকি দু’জন আগেভাগে বাড়ি চলে গেছে। এই ২ শিক্ষার্থী আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক নয়। আমরা আগে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। পরে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করবো।