বাড়ছে নতুন বইয়ের সংখ্যা, তবে মান নিয়ে প্রশ্ন!

আমাদের দেশে মেলার অন্ত নেই। অমর একুশে বইমেলা বাঙালি কৃষ্টি ও সংস্কৃতির এবং জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে। বইমেলার মতো এত বড় সাংস্কৃতিক উৎসব আর নেই। মানসম্পন্ন বইয়ের বিষয়টি এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে একটি ভালো বই মানুষকে সমৃদ্ধ করে। প্রকৃত বন্ধু হিসেবে সামনে আসে।

কারণ বইয়ের মাধ্যমে একজন মানুষ জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে নিজেকে জানার পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন। আর সেই জানার মাধ্যমে নিজেকে নিজে তৈরিও করে নেন। এ সবকিছু সম্ভব হয় শুধু একটি ভালো বা মানসম্পন্ন বই পড়ার মাধ্যমে। তাই জ্ঞান আহরণে ভালো বইয়ের কোনো বিকল্প নেই।

প্রতিবারই মেলায় ভালো বইয়ের পাশাপাশি কিছু অপ্রয়োজনীয় বইও প্রকাশ পায়। এবারো প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে অনেক বই ভালোভাবে সম্পাদনা না করেই প্রকাশিত হয়েছে। দায়সারা গোছে প্রকাশ করার ফলে থেকে যায় অসম্পাদিত। এছাড়া বইয়ে ভুলবাক্য ও ভুল বানানের অসংখ্য উদাহরণও পাওয়া যায়। যা একটি বই প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বইমেলায় বইয়ের মান ও বিক্রি নিয়ে আরটিভি নিউজের কথা হয় কথাপ্রকাশের প্রকাশক জসীম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত তিন বছরে মেলাতে আমরা দেখেছি- আগে পাঠকদের ফিকশন বইয়ের প্রতি একটা ঝোঁক ছিল। কিন্তু এখন সেখান থেকে উঠে আসছে। পাঠকরা এখন ননফিকশনও বই খোঁজছে। অনেকেই বলতেছে বই কম বিক্রি হচ্ছে। আসলে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বই যেরকম বিক্রি হওয়া দরকার, সেরকমই বিক্রি হচ্ছে। আগে হুমায়ূন আহমেদ থাকতে এক ধরনের বই বিক্রি হতো, যেটা একটু ফিকশন ধরনের ছিল। কিন্তু এখন যারাই বই কেনে, প্রতিটা পরিবারই সচেতন। সবাই সাবজেক্ট বেজ বই ছাড়া কোনো বই কেনে না। এটাই আমি গত ৩ বছরের জরিপে দেখেছি।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশ শুধু মেলা না, সারা বছরই একই রকম বই বের করে। তবে মেলাতে আমাদের একটু বই বেশি বের হয়। অন্য সময় একটু কম বের হয়। পেশাদার প্রকাশক যারা আছেন, তারা সবাই এমন কাজই করেন। এটা একটি মৌসুমি মেলা। বইয়ের জন্য উৎসবের মেলা। সেই উৎসবটা এমন হতে পারে যে, লেখক-প্রকাশকদের একটু প্রচার প্রচারণা বাড়ে। নতুন লেখকদের আগমণ বেশি ঘটে। আগে এক সময় বাংলাদেশে রিয়েল পাঠক খুঁজে পাওয়া কটিন ছিল। কিন্তু আমরা এখন রিয়েল পাঠক খুঁজে পেয়েছি।

জসীম উদ্দিন আরও বলেন, যেকোনো প্রকাশকই একটি বই ছাপালে, সেটা যেন মেলা কেন্দ্রীক না হয়। পাঠক বই কিনে যদি তাতে কিছু খুঁজে না পায়, তাহলে সেই বই তো পাঠক কিনবে না। এই রকম বই থেকে বিরত থেকে, ভালো বই করা উচিত। সাবজেক্ট ধরে বই করা উচিত। বইয়ের ভিতরে থিম থাকা উচিত। এমন বই প্রকাশ করতে হবে। এই যে প্রতিদিন মেলাতে ৫০০ কপি বা ৬০০ কপি বই জমা পড়ছে, আমরা এটা শুনতে চাই না। আমরা শুনতে চাই আজকে ৬০ কপি বই জমা পড়ছে। ৬০ কপি ভালো বই হোক। বাংলাদেশে যে কয়টি বই বের হচ্ছে, সেই কয়টি ভালো বই হোক। এটিই আমি চাই।