সিলেটে লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ

কোনো উপাচার্য ছুটি নিয়ে বিদেশে গেলে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যেতে হয়।এমনই নির্দেশনা আছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)।তবে এ নিয়মের তোয়াক্কা না করে খেয়াল-খুশিমতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেন সিলেটের বেসরকারি লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য কাজী আজিজুল মাওলা।

শুধু তা-ই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিদেশে পাচার, যুক্তরাষ্ট্রে বসে অফিস পরিচালনা, স্বজনপ্রীতি, ব্যক্তিগত ভ্রমণের নামে টিএ-ডিএ নেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। কাজী আজিজুল মাওলার বিরুদ্ধে গত ৬ মার্চ ইউজিসিতে এসব অভিযোগ দাখিল করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ রাগীব আলী। অন্যদিকে ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে ইউজিসিতে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন উপাচার্য।

২০০২ সালের ৪ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার রাগীব নগরে যাত্রা শুরু করে লিডিং ইউনিভার্সিটি।এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ২ হাজার ৬২৩ এবং স্থায়ী ও খণ্ডকালীন শিক্ষক ১১৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি বিভাগে ১৭টি প্রোগ্রাম চালু আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, ইচ্ছেমতো কার্যক্রম পরিচালনা, বিশেষ কয়েক ব্যক্তিকে সুবিধা দেওয়াসহ নানা কারণে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় কাজী আজিজুল মাওলার।এতে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে সিলেটে রাগীব আলী বিরোধী একটি অংশ।নেপথ্যে আছেন আওয়ামী লীগের সিলেট অঞ্চলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাও।

সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, বিপুল অর্থসম্পদের মালিক রাগীব আলীকে চাপে রাখার অংশ হিসেবে উপাচার্যকে ইন্ধন জোগাচ্ছেন কয়েক নেতা। তাঁদের লোভ রাগীব আলীর সম্পদের দিকে।এ ছাড়া অবৈধ আর্থিক সুবিধা আদায়ও একটি কারণ।কেননা সমস্যা না থাকলে হস্তক্ষেপেরও সুযোগ থাকে না।এ জন্যই দুপক্ষকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী আজিজুল মাওলা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সত্য নয়।সাম্প্রতিক সময়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল,তা কিছুটা নিরসন হয়েছে।এখন নিয়মানুযায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছি।তবে কিছু কর্মকর্তা এখনো অসহযোগিতা করছেন।’ 

দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ

ইউজিসিতে দাখিল করা চিঠিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি,বিদেশে অর্থ পাচার এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ মার্চ ড.কাজী আজিজুল মাওলা যোগদানের পর থেকে তাঁর ছেলে-মেয়েকে দেখাশোনা ও প্রমোদ ভ্রমণের জন্য কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে চারবার আমেরিকা সফর করেছেন।বিদেশে অবস্থানকালে তিনি কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যাননি।

এ ছাড়া ব্যক্তিগত আয়কর ফাঁকি দিয়ে বিগত দুই বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছেন, যার পরিমাণ ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের ১৯ জুলাই উপাচার্য আড়াই হাজার পাউন্ড স্টার্লিং (প্রায় সোয়া চার লাখ টাকা) লিডিং ইউনিভার্সিটির সাধারণ তহবিল থেকে যুক্তরাজ্যের একটি কোম্পানির হিসাবে পাঠিয়েছেন।এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে। 

মুখোমুখি দুই পক্ষ

জানা যায়, গত ১২ থেকে ২৪ জানুয়ারি একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে ইউজিসির অনুমতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান আজিজুল মাওলা। তাঁর দাবি, অসুস্থতা ও ফ্লাইট জটিলতার কারণে সময়মতো তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার তিন দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিতে চাইলে ট্রাস্টি বোর্ড বাধা দেয় বলে উপাচার্য ইউজিসিতে অভিযোগ করেন।তাঁর দাবি, ১৩ মার্চ আবারও কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও সাড়া দেননি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলী।

সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইউজিসির সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড.বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয় ইউজিসি।আর কেউ যদি মিথ্যা অভিযোগ দেয়, তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।