বদলি হয়ে হবিগঞ্জে থানার এসি-টেলিভিশন খুলে নিলেন ওসি!

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানার ওসি ফরিদুলের পর এবার হবিগঞ্জের বাহুবল থানার সদ্য বিদায়ী ওসি রাকিবুলের বিরুদ্ধে থানার এসিসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র খুলে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে থানা ও জেলার সুশীল সমাজের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইছে। থানার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যারা জিনিসগুলো উপহার দিয়েছেন তারাও করছেন বিরূপ মন্তব্য।

জানা যায়, ২০২১ সালের অক্টোবরে বাহুবল থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন মো.রাকিবুল ইসলাম খান। তিনি যোগদানের পর ওসির অফিস কক্ষ ও বাসার জন্য টিআর প্রকল্প থেকে দুই টনের দুটি এসি বরাদ্ধ দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দেওয়ান শাহনেওয়াজ গাজী। বরাদ্ধ হওয়ার পর বাহুবল উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তাজ উদ্দিন আহমেদ ওসির অফিস কক্ষ ও তার সরকারী বাবভবনে দুটি এসি স্থাপন করে দেন।

কিন্তু সম্প্রতি হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী এক আদেশে বাহুবল থানার অফিসার ইনচার্জ রাকিবুল ইসলাম খানকে প্রত্যাহার করে হবিগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন। এর পর পরই বদলীকৃত ওসি রাকিবুল ইসলাম খান স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের দেয়া এসি, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র খুলে নিয়ে যান। এনিয়ে সমগ্র বাহুবল তথা জেলায় সমালোচনার ঝড় উঠে।

গত ৭ আগস্ট পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলি স্বাক্ষরিত এক আদেশে ওসি রাকিবুল ইসলাম খানকে প্রথমে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করেন। এর কয়েকদিন পরই তাকে মাধবপুর থানায় পদায়ন করা হয়। বদলীর সাথে সাথেই তিনি হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি দেওয়ান শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী এমপির সরকারি অনুদানের টাকায় বরাদ্দ দেয়া বাহুবল মডেল থানায় লাগানো এসিগুলো খুলে নিয়ে যান ওসি রাকিবুল ইসলাম খান। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দেয়া অন্যান্য আসবাবপত্রও খুলে নিয়ে যান।

স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘থানার সৌন্দর্যবর্ধন ও থানায় যিনি ওসি হয়ে আসুক তিনি যেন সুবিধাটা ভোগ করতে পারে সেজন্য এসি সহ জিনিসপত্রগুলো দেয়া হয়। কারো ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নয়। শুনেছি তিনি সেগুলো খুলে নিয়ে গেছেন, এটা ঠিক হয়নি। এগুলো তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে দেয়া হয়নি, তাঁর চেয়ারটাকে সম্মান করে দেয়া হয়েছে।’

জানতে চাইলে বাহুবল মডেল থানায় সদ্য যোগদান করা ওসি মো.মশিউর রহমান বলেন- আমি এই থানায় যোগদান করেছি মাত্র কয়েকদিন হলো। যোগদানের পর অফিসে এবং বাসায় কোথাও এসি পাইনি। সরকারি অনুদানে কোন এসি বা অন্যান্য জিনিস ছিল কিনা তাও আমার জানা নেই। আর এসি বা অন্যান্য জিনিসপত্র আগের ওসি স্যার নিয়েছেন কি-না তাও আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি দেওয়ান শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আমি সরকারি বরাদ্দকৃত এসি অফিসের জন্য দিয়েছি। কাউকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দেইনি। কিন্তু সাবেক ওসি তা খুলে নেবে কেন? মঙ্গলবার উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের এক অনুষ্ঠান শেষে ইউএনও অফিসে চা চক্রের এক পর্যায়ে বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজন দলীয়কর্মী এমপির নজরে আনলে তিনি এসি খুলে নেয়ার ঘটনা শুনে রাগান্বিত হন এবং সাবেক ওসির প্রতি বৎসনা করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এসিসহ অন্যান্য আসবাবপত্র খুলে নেয়া সাবেক ওসি রাকিবুল ইসলাম খান বলেন, অফিসে কোন এসি ছিল না। বাসার এসিটি ছিল আমার ব্যক্তিগত টাকায় কেনা। তাই খুলে নিয়েছি। এছাড়া আর কোন জিনিসপত্র আমি নেই নাই।

ওসির অফিসকক্ষে এসি থাকার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করলেও ছবিতে স্পস্ট দেখা যাচ্ছে এবং খুলে নেয়ারও আলামত বিদ্যমান রয়েছে এখনো।এত প্রমান থাকার পরও তিনি অস্বীকার করেন।

এতকিছুর পরও তিনি অস্বীকার কেন করলেন এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।এনিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সমালোচনা।

থানায় কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,অফিসে এসিসহ আরও অনেক আসবাবপত্র ছিল। ওসি বদলী হওয়ার পর তিনি সেগুলো তার লোকজন দিয়ে খুলে নিয়ে গেছেন।