চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা

পুনে থেকে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলে সেই রাতেই দেশের পথ ধরে টাইগাররা। একটা মুহূর্তও যেন তারা ভারতে থাকতে রাাজি ছিলেন না। দেশে ফিরতে ফিরতে তাদের মনে হয়তো একটাই প্রার্থনা- যেন ভারত নিজেদের শেষ ম্যাচ নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে যায়। তাহলে হয়তো চরম ব্যর্থতার দগদগে ক্ষততে কিছুটা হলেও পড়বে স্বস্তির প্রলেপ। অবশ্য সেই ম্যাচ জিতে রোহিত শর্মার দল দিওয়ালীর রাতটা উদ্‌যাপন করেছে ডবল খুশির মধ্য দিয়ে।নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে তুলে নিয়েছে টানা ৯ জয়। অবশ্য ৩ ম্যাচ আগেই তারা সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে। অন্যদিকে এই জয়ের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত ২০২৫ এর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। টানা ছয় হারের পর যখন নিজেদের বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন ধুলায় মিলিয়ে যায়। ঠিক তখনই সাকিব আল হাসানদের সামনে আসে লজ্জা বাঁচানোর এই সমীকরণ। আইসিসি নাকি জানিয়ে দিয়েছে চলতি বিশ্বকাপে সেরা ৮ দল নিয়ে হবে আসন্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি’র লড়াই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিতলে অবশ্য কারও অপেক্ষা করতে হতো না। কিন্তু সেটি হলে তাকিয়ে থাকতে হয় দুই দলের জয়-পরাজয়ের দিকে। শেষ পর্যন্ত ভাগ্য সহায়, যাক কিছুতো নিয়ে দেশে ফিরেছে দল! তাহলে কি এটাই এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সন্তুষ্টির কারণ হতে পারে! হতে পারে কি বিশ্বকাপের প্রাপ্তি? নাকি এটি হবে অনেকটা শাক দিয়ে মাছঢাকার মতই। অবশ্য এতে মোটেও খুশি নয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনূস। দৈনিক মানবজমিনকে তিনি বলেন, ‘এতে মোটেও সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ নেই। আমরাতো বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে যাইনি। এতে কেউ সন্তুষ্ট না।’ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ জয় দিয়ে দারুণ কিছু বার্তাও দিয়েছিল। এরপর থেকে টানা ৬ ম্যাচে হার। এরই মধ্যে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান জানিয়ে গেলেন শুধু সেমিফাইনালই শেষ হয়নি তাদের এই আসরে সেরা ৮- না থাকলে খেলা হবে না চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও। সেই থেকে শুরু হয় এ নিয়ে আলোচনা। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতে কিছুটা হলেও নতুন আশার পালে হাওয়া লাগে। তবে এত সহজ নয়। নিজেদের হারের কারণে তাকিয়ে থাকতে হয় অন্যদের জয়-পরাজয়ের দিকে। এমন করে শেষ ম্যাচে এসে বাংলাদেশের সামনে হাজির নতুন সমীকরণ। জিততে হবে অজিদের বিপক্ষে নয়তো হারলেও এগিয়ে নিতে হবে রান রেট। দলীয় কোন্দল, বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে বিশ্বকাপের শেষ মোড়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে অজিদের বিপক্ষে ম্যাচে টসে হেরেও ৮ উইকেট ৩০৬ রান করে। শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। হেরে গেছে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে। ব্যাট হাতে ৩শ’র বেশি রান করেছে আর অজিদের আটকে রেখেছে ৪৪.৪ ওভার পর্যন্ত। যদি এই রান তারা ২৩ ওভারে করে ফেলতো তাহলে হয়তো শেষ সান্ত্বনাটুকু খুঁজে পাওয়ার সুযোগ হারাতো বাংলাদেশ। অবশ্য নিক্তির সুতায় ঝুলে ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার ভাগ্য। তাকিয়ে থাকতে হয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ভারতের জয়ের দিকে। 

দলের এমন ব্যর্থতা আর লেজেগোবরে অবস্থা নিয়ে দারুণভাবে নড়েচড়ে বসেছে বিসিবি। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে ব্যর্থতার দায়টা সমানভাবে জালাল ইউনূসের উপরও বর্তায়। তবে তিনি মনে করেন এখানেই শেষ নয়। সেইসঙ্গে তিনি এ নিয়ে এখনই বড় কোনো মন্তব্য করতেও রাজি নন। এরপরও তিনি বলেন, ‘এমন পারফরমেন্সতো আমরা আশা করিনি। এরচেয়ে অনেক অনেক ভালো কিছু চেয়েছিলাম। যাইহোক আমি মনে করি এখানেই শেষ নয় ক্রিকেট। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’