সিলেটে মাদক মামলায় ভারতীয় নাগরিকসহ তিনজনের যাবজ্জীবন

সিলেটে পৃথক মাদক মামলায় ভারতীয় নাগরিকসহ ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক মাসের করে সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ দু’টি মামলার রায় ঘোষণা করেন। আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

দণ্ডপ্রাপ্তরা আব্দুস শহীদ সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা সুলতানপুর গ্রামের মৃত আফতাব আলীর ছেলে। তিনি জকিগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত একটি মাদক মামলায় দণ্ডিত হন। এছাড়া সিলেটে ওসমানীনগরের আরেকটি মাদক মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের কালিজুরি গ্রামের মৃত মুহিবুর রহমানের ছেলে সায়েক মিয়া (৪০) ও ভারতের ত্রিপুরা জেলার পশ্চিম থানার জয়পুর এলাকার মোহন বর্মণের ছেলে কৃষ্ণ বর্মণ (৩৩)। মামলার বরাত দিয়ে আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২৯ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় গোপন সংবাদে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনকপুর ইউনিয়নের পরিত্যাক্ত মিলঘরে অভিযান চালালে আব্দুস সাহিদকে আটক করে পুলিশ। এসময় তার দেহ তল্লাসী করে ৫ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। এসময় তার সঙ্গে থাকা নজরুল ইসলাম ও সাহেদুজ্জামান পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৭ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (নং-২৯৭) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) শাহিনুর রহমান। মামলাটি বিচারের জন্য অত্র আদালতে গেলে দায়রা ৪২৯/২২ মূলে রেকর্ড করা হয়। গত ২০২২ সালের ১২ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। দীর্ঘ শোনানীতে ১২ জন সাক্ষির মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক এ রায়ে আব্দুস সহিদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো এক মাসের ঘোষণা করেন।মামলায় পলাতক দুই আসামি নজরুল ইসলাম ও সাহেদুজ্জামানকে খালাস প্রদান করেন। এছাড়া ওসমানীনগর থানার দায়েরকৃত মামলার বরাত দিয়ে আদালত সুত্র জানায়, এ বছরের ২৮ জুলাই ভারত থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়া হয়ে মিথাইল অ্যামফেটামিন মিশ্রিত ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে আসামি সায়েক মিয়া ও কৃষ্ণ বর্মণ।গোপন সংবাদে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার সার্কেলের পরিদর্শক অমর কুমার সেন ওইদিন সন্ধ্যায় ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজারে স্বাদ মিষ্টি দোকান থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় সায়েক মিয়ার কাছ থেকে ৪ হাজার পিস মিথাইল অ্যামফেটামিন মিশ্রিত ইয়াবা ট্যাবলেট, ৫শ’ টাকার ৪টি ভারতীয় নোট ও মোবাইল সে জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় অপর আটককৃত কৃষ্ণ বর্মণের কাছ থেকে ৬ হাজার পিস মিথাইল অ্যামফেটামিন মিশ্রিত ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক অমর কুমার সেন বাদি হয়ে ওসমানীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে অধিদপ্তরের উপ পরিদর্শক (এসআই) কাকন রায় আসামিদের বিরুদ্ধে এ বছরের গত ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ১৯ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ৭ জন সাক্ষির জবানবন্দির প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক সায়েক মিয়া ও কৃষ্ণ বর্মণকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন এবং আসামি সায়েকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট রাজু ভৌমিক ও কৃষ্ণ বর্মণের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ তারেক। এছাড়া ওপর মামলায় দণ্ডিত আব্দুস সহিদ ও পলাতক নজরুল ইসলামের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহরিয়ার উজ জামান পলাশ এবং সাহেদুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন অ্যডভোকেট মো. মো. রুহুল আমিন।