চুনারুঘাটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, বিশ্বনাথে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম

শিক্ষা সফরে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট গিয়ে বর্বর হামলার শিকার হয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথ পৌর শহরের ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। 

বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে দুর্বৃত্তদের হামলার পর থানা পুলিশ এসে আহতসহ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদে হামলাকারীদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিশ্বনাথের তরুণ ও যুব সমাজ।তবে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ বা মামলা দায়ের করা হয়নি। 

জানা যায়, বিশ্বনাথ ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ১০০জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে গ্রিনল্যান্ড পার্কে যাওয়া হয়। পার্কে সামনে রাস্তায় বাস দাঁড়ালে শিক্ষার্থীরা নামার সময় সেখানে অবস্থানরত একটি টমটমের যাত্রী এক শিক্ষার্থী গালি দিলে এনিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। 

এতে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫-২০জন শিক্ষার্থী-শিক্ষক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।তাদেরকে চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান শেষে বিশ্বনাথে নিয়ে আসা হয়।

বর্তমানে গুরুতর আহত ৭জন শিক্ষার্থী বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিক আহমদ।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন- শিক্ষিকা ফাইজা খানম, শিক্ষক আব্দুল মুবিন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-নাঈম আহমদ, খালেদ, আব্দুল গফুর, সাকিব, সুলতান,মাহিশা,ইভা, সাদিয়া, তানহাসহ আরও কয়েকজন।

এদিকে,শিক্ষার্থীদের উপর এমন বর্বর হামলায় ঘটনায় বিশ্বনাথে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। ন্যাক্কারজনক ও ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে জোর দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।

শিক্ষার্থীদের উপর এমন হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করেছেন সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানসহ বিভিন্ন মহলের নেতৃবৃন্দ।

অপরদিকে, এই হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাত পৌণে ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রশিদপুরে সড়ক অবরোধ করে বিশ্বনাথ তরুন-যুব সমাজের ব্যানারে। প্রায় আধাঘন্টা সড়ক অবরোধ করে হামলাকারীদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।

অবরোধকারীরা বলেন, আজকের এই ঘটনার পর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা হলেও কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হামলাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।তা না হলে পুরো বিশ্বনাথের মানুষ ঐকবদ্ধ হয়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।প্রতিবাদ মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন বিশ্বনাথ পৌরসভার প্যানেল মেয়র রফিক হাসান,এব্যাপারে ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল দুলাল আহমদ, বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আব্দুল মুমিন মামুন, বিশ্বনাথ উপজেলা যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ আমির আলী, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রফিক আলী, সংগঠক আব্দুর নূর।এব্যাপারে ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিক আহমদ বলেন, ‘গ্রীনল্যান্ড পার্কে যাওয়ার পর বাস থেকে শিক্ষার্থীরা নামার সময় সেখানে অবস্থানরত একটি টমটমের যাত্রী আমাদের এক শিক্ষার্থী গালি দিলে এনিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর আমরা শিক্ষার্থীদের পার্কের ভিতরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের এমন আচরণে দুঃখপ্রকাশ করে, তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। কিন্তু সেই যাত্রী তাতে শান্ত না হয়ে নিজের সাঙ্গপাঙ্গকে জড়ো করে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিতভাবে আমাদের উপর হামলা করে। তাদের এমন অবস্থা থেকে আমরা ৯৯৯ ও সেখানকার উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবহিত করি। তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবে করবে বলে আশ্বাস দিলেও কার্যত কোন কিছুই হয়নি।’

বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো ধরনের মামলা বা অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানান এই শিক্ষক। 

এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’