বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধীহীন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা। কয়েক বছর ধরে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এসব নির্বাচন। এবার সেই অপবাদ ঘুঁচাতে চায় শাসক দল। যেকোনো মূল্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার বাড়াতে নেয়া হয়েছে নানা কৌশল। ভোটার আনতে লাখ টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে একটি নির্বাচনী এলাকায়। ভোটকেন্দ্রে আসতে ভোটারদের নানা ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে প্রার্থীদের তরফে। ভোটকেন্দ্রে না গেলে সরকারি সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার কথাও বলছেন কোনো কোনো নেতা। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে সরকারি দলের নেতাদের কিছু কৌশল প্রকাশ্যে প্রয়োগ করা হচ্ছে। আবার কিছু কৌশল নেয়া হয়েছে অতি গোপনে। ভোটার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এলাকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন কৌশল নেয়া হয়েছে।এবার নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেবেন এমন ভোটারদের পোস্টাল ভোট গ্রহণের উপর জোর দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের পরিবারের সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এর বাইরে সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিশ্চিত করতে বিভিন্ন এলাকায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে আনসার ভিডিপি’র ৬০ লাখ সদস্যের বড় অংশ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন। তাদেরও সবার পোস্টাল ভোট নিশ্চিত করা এবং পরিবারের সদস্যদের কেন্দ্রে যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোট না দিলে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে ভোটারদের। এবার ভোটার টানতে আওয়ামী লীগের অন্যতম কৌশল দলের বিকল্প বা ডামি প্রার্থী। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য কিছু দল নির্বাচনে থাকলেও তারা তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারছে না। এমন অবস্থায় দলের ডামি বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই বেশিরভাগ আসনে আওয়ামী লীগ বা মিত্র ও শরিক দলের প্রার্থীদের সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে আছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দুই নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম সারোয়ার শিপন নৌকায় ভোট না দিলে অসহায়দের ভাতা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় তাকে শোকজ করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের আঞ্জুম সুলতানা সীমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল তাকে শোকজ করেন অনুসন্ধান কমটি ২৫৪-এর চেয়ারম্যান মো. সিরাজ উদ্দিন ইকবাল।একই অভিযোগ উঠেছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয়ের ফিল্ড সুপারভাইজার আব্দুল হাকিমের বিরুদ্ধে। ফোন দিয়ে নৌকায় ভোট না দিলে প্রতিবন্ধী, বিধবা ও বয়স্ক ভাতার সুবিধাভোগীদের কার্ড বাতিলের হুমকি দেন তিনি। আব্দুল হাকিম সরকারি কর্মচারী হয়ে আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের প্রচারণা করছেন। নৌকার প্রচারণা সমাবেশে নৌকা প্রার্থী আব্দুল মমিন মণ্ডলের পাশের চেয়ারে বসে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন- এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাই ভাতাভোগীরা রয়েছেন আতঙ্কে। নোয়াখালীতে নৌকার প্রার্থীর ভোট নিশ্চিত করতে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৪৯২ জন সুবিধাভোগীর কার্ড জব্দ করেন সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন। এ ঘটনায় তাকে শোকজ করে ইসি। নোয়াখালী-২ আসনের (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী আংশিক) সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহজাহান মামুন ওই নোটিশে সই করেন। অন্যদিকে আক্তার হোসেন এসব কার্ড জব্দ করার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে অবগত আছেন নৌকার প্রার্থীও।
মন্তব্য