যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে সাড়ে ৩ কোটি টাকার গাড়ি চুরির অভিযোগ

নগরীর একটি গ্যারেজে লুকিয়ে রাখা প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার টয়োটো কোম্পানির ‘জাগুয়া এক্স’ স্পোর্টস কার (নম্বর চট্টো-মেট্রো-ভ-১১-০০৩৯) উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রায় পাঁচ বছর ধরে গাড়িটি সেখানে লুকিয়ে রাখা ছিল।

গত বুধবার গভীর রাতে গাড়িটি উদ্ধার হলেও এ নিয়ে চরম গোনীয়তা বজায় রাখা হয়। অবশেষে গত শুক্রবার রাতে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. লুৎফে আলী রনিসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লতিফা শওকতের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

ওই মামলার বাদী রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ধাপ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে- অভিযুক্ত আসামি রনি ২০১৭ সালে পালস কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য একটি ভবন ভাড়া নেন। ওই চিকিৎসক লুৎফে আলী রনি তার মা আওয়ামী লীগ নেত্রী লতিফা শওকতের নামে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সেখানেই তার গাড়ি রাখার জন্য গ্যারেজও ভাড়া করেন।

পরে পালস কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার সেখান থেকে স্থানান্তর করা হলেও ওই গাড়ি সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়নি। এ নিয়ে গ্যারেজের মালিকপক্ষ একাধিকবার বললেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেখান থেকে চোরাই গাড়িটি সরিয়ে নেওয়া হয়নি। অবশেষে গত মঙ্গলবার গ্যারেজের মালিক পুলিশকে লিখিত অভিযোগ দিলে ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ে। পুলিশ বুধবার গভীর রাতে গাড়িটি উদ্ধার করে।

এই গাড়ির মালিক এবং গাড়ির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান ডা. লুৎফে আলী রনি। তিনি বলেন, এ গাড়ির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

রনি দাবি করে বলেন, পূর্বের মালিক আমার ভাড়া করা ‘পালস কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের’ জায়গা বিক্রি করেন পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে। আমি পরে সেখান থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩০ লাখ টাকা নিয়ে চলে আসি। আমি এখনো মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে জমি বিক্রির টাকা পাই। এখনো উনার ক্রয়কৃত জমির সীমানা প্রাচীরের ভেতরে আমার জমি রয়েছে।

আমার জমি দখল করে রেখেছেন উনি। পপুলার ডায়াগনস্টিকের মালিকের সঙ্গে জমি নিয়ে চুক্তি হয়েছে; তিনি আমাকে জমির টাকা দেবেন। কিন্তু টাকা দিতে ১৩ দিন ধরে বসিয়ে রেখেছেন। গাড়ির মামলা কেন দিল তাও জানি না। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক।

পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, জায়গাটি আমার ক্রয় করা। রনি জায়গা ছাড়ছিল না। আমরা থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ এসে গাড়িটি একটি রুমে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পায়। যারা জায়গা দখল করে রেখেছে তারাই হয়তো গাড়িটি রেখেছে। এ গাড়ি আমাদের নয়।

কোতোয়ালি থানার এসআই মাহমুদুল হাসান জানান, যে জায়গাটিতে গাড়িটি ছিল সেটি এক সময় ডা. লুৎফে আলী রনি মায়ের নামে পরিচালিত পালস কেয়ার ডায়াগস্টিক সেন্টার চালাত। পরে সে জায়গাটি বিক্রি করে দেয় তারা। জমিটি ক্রয় করেন পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, জমিটি বিক্রির পর সবাই জায়গা ছেড়ে চলে যায় কিন্তু ডা. রনি সেখান থেকে যায়নি। ফলে মোস্তাফিজুর রহমান গত ১০ অক্টোবর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা গত বুধবার রাতে ঘটনাস্থলে যাই। এরপর সেখানে গাড়িটি তালাবদ্ধ একটি ঘরে দেখতে পাই।

কিন্তু এ গাড়িটির মালিকানা কেউই দাবি করছে না। না ডা. লুৎফে আলম রনি, না মোস্তাফিজুর রহমান। যেহেতু জায়গাটিতে ডা. রনি অবস্থান করছিলেন তাই আমরা তার নামে মামলা দিয়েছি।

তিনি বলেন, গাড়িটি অনেক দিন ধরেই পড়েছিল। গাড়ি স্টার্ট নেয় না। স্থানীয় মেকার ডেকে এনেছি, তারাও পায়নি। ফলে রেকার দিয়ে গাড়িটি থানায় নেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের হেফাজতে রয়েছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডিবি অ্যান্ড মিডিয়া) সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গাড়ি উদ্ধারের পর মামলা হয়েছে। ডা. লুৎফে আলী রনি এবং ডা. মোস্তাফিজুর রহমান দুজনই মাড়ির মালিক নন বলে দাবি করেছেন।

বিআরটিএর মাধ্যমে প্রকৃত মালিককে খুঁজতে মাঠে কাজ করছে পুলিশ। তিনি বলেন, রংপুরে গাড়িটি কীভাবে এলো, তা কেউ বলতে পারছে না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।