ইউক্রেনে আটকে পড়া জাহাজ থেকে বাংলাদেশিদের বাঁচার আকুতি

ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে থাকা ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এতে হাদিসুর রহমান আরিফ নামে জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী নিহত হয়েছেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জাহাজে আটকে পড়েছেন ২৮ নাবিক-ক্রু। তারা সবাই বাংলাদেশি। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের বন্দরে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজে আটকে পড়া এসব নাবিকরা বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন দেশের কাছে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ফারজানা ইসলাম মৌ নামে এক ক্যাডেট বলছেন, ‘আমি ইঞ্জিন ক্যাডেট মৌ বলছি। আমাদের শিপে বোমা মারা হয়েছে। আমাদের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার স্যার অলরেডি মারা গেছেন। আমরা এখনও শিপের মধ্যে আছি। আমরা সবাই চাচ্ছি, এখান থেকে বের হতে। আপনারা প্লিজ কোনও একটা উপায় করে আমাদেরকে বের করুন। আমরা এখানে থাকতে চাচ্ছি না।’

ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি নামের আরেক ক্যাডেটকে ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের জাহাজে কিছুক্ষণ আগে বোম্বিং হয়েছে। আমরা সবাই খুব বিপদে আছি। আমাদের প্লিজ সবাইকে উদ্ধার করেন। এখান থেকে আমাদের বাঁচান।’

ক্যাডেট তুহিন বলেন, ‘আমি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ থেকে বলছি। কিছুক্ষণ আগে আমাদের ওপর বোমা মারা হয়েছে। আমাদের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার স্যার অলরেডি মারা গেছেন। আমরা সবাই খুব বিপদে আছি। আমাদেরকে প্লিজ উদ্ধার করেন। আমাদের বাঁচান।’

বুধবার হামলার পর অলভিয়া বন্দরে থাকা বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে আগুন ধরে যায়। শুরুতে নাবিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। অলভিয়া বন্দর থেকে একটি টাগবোট এসে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। নাবিকদের চেষ্টায় জাহাজের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলায় জাহাজের ব্রিজ ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে নিথর দেহ পড়ে ছিলেন হাদিসুর রহমান আরিফ।

এদিকে, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) নির্বাহী পরিচালক ড. পীযুষ দত্ত বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বলেন, ‘জাহাজে রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান ওই জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী ছিলেন। তার লাশ বর্তমানে ওই জাহাজের ফ্রিজে আছে। তার লাশ আনা এত সহজ হবে না। জাহাজ থেকে নাবিক-ক্রুদের নেমে আসার পর এসি বন্ধ হয়ে যাবে। তখন লাশ ভালো থাকবে না। এ কারণে মর্গে রাখার চেষ্টা চলছে। জাহাজের বাকি ২৮ নাবিক-ক্রু অক্ষত আছেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। সেখানে জাহাজে আটকে পড়া নাবিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করছে। শিগগিরই তাদের দেশে আনা সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজে থাকা নাবিকদের উপকূলে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার আগে বন্দরের তীর থেকে কাউকে সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য ক্লিয়ারেন্স পেতে হবে। ক্লিয়ারেন্স পেলে আমরা তাদের যেতে অনুমতি দেবো।’

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন মো. আনাম চৌধুরী বলেন, ‘ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে নোঙর করে রাখা বিএসসির জাহাজ এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে হামলার ঘটনায় জাহাজে আগুন ধরে যায়। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ৯টা ২৫ মিনিট ও ইউক্রেন সময় ৫টা ২৫ মিনিটে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার পর জাহাজে শর্ট সার্কিটের কারণে আলো জ্বলছে না। চালু হচ্ছে না জাহাজের ইঞ্জিন। ইমার্জেন্সি জেনারেটর দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পরপর আলো জ্বালানো হচ্ছে। জাহাজটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজে থাকা ২৯ জনই বাংলাদেশি। এখানে কয়েকজন নারী ক্যাডেটও আছেন। তাদের সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি। হামলায় একজন মারা গেছেন। বাকিরা সুস্থ আছেন। তাদের কীভাবে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় আমরা সে চেষ্টা করছি।’